• আমরা আছি বলেই বাংলা শান্ত, বিধানসভায় বিজেপিকে জবাব মমতার
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • বিভাজনের রাজনীতি করার অভিযোগ তুলে বিধানসভায় বিজেপিকে তুলোধনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ধরে ধরে জবাব দিয়েছেন বিরোধী দলনেতার প্রতিটি অভিযোগের। মমতা এদিন বিধানসভায় দাবি করেছেন, ‘আমরা আছি বলে বাংলা এখনও শান্ত আছে। বাংলাদেশে এই পরিস্থিতির পরও তার আঁচ রাজ্যে পড়েনি।’

    মঙ্গলবার রাজ্যপালের ভাষণের উপর ধন্যবাদজ্ঞাপক বক্তব্য পেশ করতে উঠে বিজেপিকে নিশানা করেছেন মমতা। পাশাপাশি শুভেন্দুর একাধিক অভিযোগেরও জবাব দিয়েছেন। সোমবার বিরোধী দলনেতা সহ ৪ বিজেপি বিধায়ককে সাসপেন্ড করার পর উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল বিধানসভা চত্বর। তাঁদের বিরুদ্ধে বিধানসভা কক্ষে বিশৃঙ্খলা তৈরির অভিযোগ উঠেছিল। ওয়েলে নেমে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে কাগজ ছোঁড়ার অভিযোগও উঠেছিল শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে। এরপরই ৪ বিজেপি বিধায়ককে সাসপেন্ড করা হয়। এই ঘটনার পর বিজেপির তরফে সমাজমাধ্যমে দুটি ভিডিও ক্লিপ ছড়িয়ে অভিযোগ করা হয়, সংসদে মমতাও কাগজ ছুঁড়েছিলেন, এমনকী বিধানসভায় ভাঙচুরও চালিয়েছিলেন। যদিও এই সব অভিযোগেরই ধরে ধরে জবাব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নাম না করে তুলোধনা করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে।

    সংসদে কাজ ছোঁড়া প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ২০০৪ সালে তিনি লোকসভায় একা ছিলেন। সেই সময় তাঁর সঙ্গে সংসদে খারাপ আচরণ করা হত। সাত দিন ধরে নোটিশ দেওয়ার পরেও কথা বলতে দেওয়া হত না। সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপি মিলে গিয়ে তাঁকে বক্তব্য রাখতে দিত না বলে অভিযোগ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

    বিধানসভায় ভাঙচুরের অভিযোগ প্রসঙ্গে মমতার দাবি, সেই দিন সিঙ্গুরে তাঁকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরে তিনি বিধানসভায় গিয়ে তৎকালীন বিরোধী দলনেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘরে গিয়েছিলেন। মমতার দাবি, ‘সেই দিন আমার সহকর্মীরা ক্ষুব্ধ ছিলেন। কিন্তু আমি কোনও জিনিসে হাত দিইনি। এখনও সেই প্রমাণ আছে।’ উল্লেখ্য, বিধানসভায় ভাঙচুর করা হয়েছে বলে বিজেপি যে ভিডিও শেয়ার করেছে সেখানে মমতাকে বিধানসভার আসবাব ভাঙতে দেখা যায়নি।

    শুভেন্দুদের একাধিক প্রশ্নের জবাব দেওয়ার পর বিজেপিকে নিশানা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি অভিযোগ করেন, বাংলাদেশে অশান্তির আবহে বর্ডারে গিয়ে রাজ্যের মানুষকে উস্কানি দিয়েছিল বিজেপি। তাঁর দাবি, বিজেপি ভুলে গিয়েছিল বাংলাটা দেশের মধ্যেই, দেশের বাইরে নয়। পশ্চিমবঙ্গে দেশের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য। অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক দুই নিরাপত্তার জন্যই বাংলা গুরুত্বপূর্ণ। এরকম গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যকে উস্কানি দিয়ে অশান্তি পাকানোর চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মমতা। তাঁর দাবি, তৃণমূল সরকার ছিল বলেই অনভিপ্রেত কোনও ঘটনা ঘটেনি।

    কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা (ডিএ)–র ফারাক নিয়ে রাজ্য সরকারকে একাধিক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। সম্প্রতি রাজ্য বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য ৪ শতাংশ ডিএ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু তারপরেও কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের কর্মচারীদের ডিএ–র ফারাক প্রায় ৩৫ শতাংশ। এই আবহে গত ১৪ বছরে সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘভাতা বাবদ রাজ্যের কত খরচ হয়েছে তার হিসেব দিয়েছেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘সিপিএম আমলে ডিএ দেওয়া হয়েছে ৩৫ শতাংশ। সেখানে ২০১১ সাল থেকে ডিএ বাবদ ২০২৫/২৬ সাল পর্যন্ত সরকারের খরচ বেড়ে দাঁড়াবে ২ লক্ষ কোটি টাকা।’ মমতার দাবি, কেন্দ্রের বঞ্চনা সত্ত্বেও সরকারি কর্মীদের যথাসাধ্য ডিএ দিয়ে থাকে রাজ্য।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)