বিবাদী বাগের লাইসেন্সড অস্ত্রশস্ত্রের দোকান থেকে একটি–দু’টি নয়, অন্তত খান দশেক দোনলা বন্দুক বেআইনি ভাবে কালোবাজারে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে গোয়েন্দারা মনে করছেন। তদন্তে জানা গিয়েছে, সরকারি গুলি ও বন্দুক লাইসেন্সড দোকান থেকে এই ভাবে পাচারের মূলে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জীবনতলার ঈশ্বরীপুরের হাজি রশিদ মোল্লা। শুক্রবার রাতে যার বাড়িতে হানা গিয়ে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স বা বেঙ্গল এসটিএফের গোয়েন্দারা প্রায় ২০০টি কার্তুজ এবং একটি দোনলা বন্দুক উদ্ধার করেছেন।
গোয়েন্দাদের বক্তব্য, বিবাদী বাগের ওই দোকানের স্টক রেজিস্টার অর্থাৎ বন্দুক ও কার্তুজের হিসেব দেখার দায়িত্বে থাকা কর্মী, বারুইপুরের শান্তনু সরকারের সঙ্গে রশিদ মোল্লার বন্ধুত্ব ছিল এই পাচারের ভিত্তি। বেঙ্গল এসটিএফ সূত্রের খবর, বিবাদী বাগের ওই গুলি–বন্দুকের দোকানে কলকাতা পুলিশের রিজ়ার্ভ ফোর্সের আর্মস অ্যাক্ট ডিপার্টমেন্ট শেষ বার ইনস্পেকশনে গিয়েছে ২০২৪ সালের নভেম্বরে। অথচ প্রত্যেক মাসে সেই ইনস্পেকশন অর্থাৎ স্টক রেজিস্টারের তথ্যের সঙ্গে দোকানে থাকা গুলি–বন্দুক মিলিয়ে দেখার কথা কলকাতা পুলিশের। তদন্তকারীদের একাংশের প্রশ্ন, এই তিন মাস, অন্তত ২০২৪–এর ডিসেম্বর ও ২০২৫–এর জানুয়ারি, এই দু’মাস কেন ইনস্পেকশন হয়নি?
পুলিশ ওই দোকানের স্টক সরেজমিনে পরীক্ষা করে দেখেছিল কি না, সে ব্যাপারে তদন্ত করতে ইতিমধ্যেই কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ ভর্মা নির্দেশ দিয়েছেন। লালবাজার সূত্রের খবর, লাইনেসন্সড দোকান থেকে বন্দুক ও গুলি পাচারের ওই ঘটনা সামনে আসার পর বাহিনীকে সতর্ক করেছেন সিপি। তা ছাড়া, গুলির স্টক মেলানোর জন্য উচ্চপদস্থ কোনও পুলিশকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।
বেঙ্গল এসটিএফ সূত্রের খবর, বছর কয়েক আগে বিবাদী বাগের দোকানে হাজি রশিদ মোল্লা বন্দুক–কার্তুজের দরদাম করতে এসেছিল। সেখানেই তার সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় দোকানের স্টক রেজিস্টার দেখার দায়িত্বে থাকা কর্মী শান্তনু সরকারের। ধৃত হাজিকে জেরা করে এই তথ্য মিলেছে বলে গোয়েন্দাদের দাবি। ওই দোকানে হাজি কয়েক বার আসার পর ধীরে ধীরে তার যেমন শান্তনুর সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়, তেমনই হাজি পরিচিত মুখ হয়ে ওঠে দোকানের আর এক কর্মী জয়ন্ত দত্ত ও অন্য কয়েক জনের কাছেও।
তার পর থেকেই বন্দুক ও কার্তুজ শান্তনুর থেকে বেআইনি ভাবে কিনতে শুরু করে হাজি রশিদ, এমনটাই জেনেছে বেঙ্গল এসটিএফ। তদন্তকারীদের বক্তব্য, বন্দুকের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ কার্তুজও দোকান থেকে একই ভাবে বেরিয়েছে। শান্তনুর কাছ থেকে যে দামে হাজি রশিদ বন্দুক ও গুলি কিনত, তার বেশ কয়েক গুণ বেশি দামে সেটা বিক্রি করা হতো হাড়োয়ার ফারুক মল্লিককে। এই ভাবে কলকাতা ও লাগোয়া কয়েকটি জেলায় বিবাদী বাগের ওই আইনি দোকানের গুলি ও বন্দুক বেআইনি ভাবে পৌঁছেছে।
মঙ্গলবার আলিপুর আদালতে ফের হাজির করানো হয় ধৃত হাজি রশিদ মোল্লা, আশিক ইকবাল গাজি, আব্দুল সেলিম গাজি ও জয়ন্ত দত্তকে। হাজি রশিদকে ১৪ দিনের জন্য জেল হেফাজত ও বাকি তিন জনকে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এসটিএফ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।