• ‘রাজ্যের লোককে করমণ্ডল এক্সপ্রেস কেন ধরতে হয়?’ ভর্ৎসনা হাইকোর্টের
    এই সময় | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়: প্রায় পাঁচ দশক আগে দানে পাওয়া জমিতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সম্প্রসারণের না–করে এতদিনে সেখানে জল প্রকল্প হচ্ছে। আর রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব পাঁচ দশক পরেও ওই জায়গায় ১০ শয্যার স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকার পক্ষেই সওয়াল করে রিপোর্ট দিচ্ছেন। সেই রিপোর্ট দেখে ক্ষুব্ধ কলকাতা হাইকোর্ট। ওই রিপোর্টকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ জনহিতকর রাষ্ট্র হিসেবে নাগরিক পরিষেবা বা সুরক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্যের বিভিন্ন দিকের ত্রুটি তুলে ধরে সমালোচনা করেছে।

    প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি চৈতালি চট্টোপাধ্যায় দাসের ডিভিশন বেঞ্চের চরম ভর্ৎসনার মুখে পড়ে এক সময়ে রাজ্যের কৌঁসুলি ১০ বেডের ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে ২৫ শয্যার করে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেন। তবে প্রধান বিচারপতি এই ব্যাপারে কোনও নির্দেশ না–দিয়ে রাজ্যকেই তার বাসিন্দাদের কল্যাণে কী করণীয়, তা ঠিক করার পরামর্শ দেন।

    দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুরে কাশীনগর এলাকায় ১৯৭৬ সালে ১০ শয্যার স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে বেড আরও বাড়ানোর জন্য স্থানীয় একটি পরিবারের কাছে চেয়ে ৩০ বিঘা জমি বিনামূল্যে পেয়েছিল রাজ্য সরকার। হাইকোর্টের আগের নির্দেশে রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব এ ব্যাপারে একটি রিপোর্ট দেন। সেই রিপোর্টে যুক্তি দেওয়া হয়েছে যে, ১০ শয্যার হাসপাতালই সেখানে যথেষ্ট।

    স্বাস্থ্য সচিবের রিপোর্ট দেখে প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, ‘১৯৭৬ সালে যেখানে ১০ বেডের হাসপাতাল ছিল, ২০২৫ সালেও সেখানে ১০ বেডের হাসপাতাল যথেষ্ট বলে আপনাদের সচিব দাবি করেছেন। কেবল কোনও নির্বোধই এই যুক্তিতে বিশ্বাস করবে।’ গভর্নমেন্ট প্লিডার (ডিপি) অনির্বাণ রায়ের উদ্দেশে ক্ষুব্ধ ডিভিশন বেঞ্চের উক্তি, ‘আপনারা পার্ক স্ট্রিটে ক্রিসমাসের লাইটিং দেখেই খুব গর্ব বোধ করেন। ভাবেন পৃথিবীটা কত সুন্দর। বাস্তবে চোখ মেলুন। শহর থেকে দূরের মানুষের দিকে তাকান। দেখবেন, তাঁরা কী কষ্টে আছেন।’ চাঁচাছোলা ভাষায় প্রধান বিচারপতির কটাক্ষ, ‘আপনারা ভোট নিয়ে চিন্তিত, ভোটারদের নিয়ে নয়।’ প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘মানুষকে কেন করমণ্ডল এক্সপ্রেস ধরতে হয়? আপনারা এখানে চিকিৎসার ভালো ব্যবস্থা না–করলে মানুষ চিকিৎসার জন্য দক্ষিণ ভারতে যাবে।’ তাঁর বক্তব্য, রাজ্য সরকার হাসপাতাল তৈরি না–করলে, চিকিৎসার সুবিধে না–দিলে মানুষ তো বেসরকারি হাসপাতালে যেতে বাধ্য হবেনই।

    ঘটনাচক্রে, প্রধান বিচারপতি এবং জিপি, দু’জনেই দুই চিকিৎসকের পুত্র। দু’জনের মতান্তর হয় দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলোয় চিকিৎসার জন্য পশ্চিমবঙ্গের মানুষদের যাওয়ার কারণ নিয়ে। যদিও আদালতে সেই বির্তক এক সময়ে নিজেরাই থামিয়ে দেন।

    তবে প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, ‘যাঁরা আদিবাসী হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছেন, তাঁদের কি অধিকার নেই আধুনিক সমাজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেদের উন্নত করার?’ যেখানকার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মাত্র ১০টি শয্যা থাকা নিয়ে হাইকোর্ট ক্ষুব্ধ, সেই মথুরাপুরের তল্লাটটি সুন্দরবন অঞ্চলের মধ্যে। রাজ্যকে প্রধান বিচারপতি মনে করিয়ে দেন, ‘আপনারা সুন্দরবনের মধুর জিআই ট্যাগ নিয়ে গর্ব করেন। সেটা সংগ্রহ করতে কত কষ্ট করতে হয় জানেন? হয়তো মনে করেন যে, এই মানুষরা শিক্ষিত হয়ে সব সুযোগ–সুবিধি পেয়ে গেলে মধু কে সংগ্রহ করবে? তাই তাঁদের সেই তিমিরেই রাখা হয়।’ প্রধান বিচারপতির বক্তব্য, ‘এ রাজ্যে হুইলচেয়ার দেওয়ার জন্যও আমাদের নির্দেশ দিতে হয়। খুবই লজ্জাজনক অবস্থা।’ রাজ্যের বহু ক্ষেত্রে চুক্তি ভিত্তিক কর্মী নিয়োগের সমালোচনা করে প্রধান বিচারপতির পরামর্শ, ‘আপনাদের নিয়োগ সংক্রান্ত নীতির পরিবর্তন করতে হবে। মানুষই আপনাদের ক্ষমতায় বসিয়েছে। তাদের কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব আপনাদের।’

    জমিদাতা পরিবারটির তরফে আইনজীবী পঙ্কজ হালদার বলেন, ‘প্রয়োজনে আরও জমি দিতে পরিবারটি প্রস্তুত। কিন্তু হাসপাতালে বেডের সংখ্যা বাড়ানো হোক।’ মামলার পরবর্তী শুনানি ২৫ ফেব্রুয়ারি।

  • Link to this news (এই সময়)