• পটের পাঁচালিতে অপু-দুর্গা, উটে ফেলুদাও
    এই সময় | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • দিগন্তবিস্তৃত কাশবনের মধ্যে নিজেদের অবস্থানটা ঠিক বুঝে উঠতে পারছিল না অপু–দুর্গা। অপু তো দিদিকে জিগ্যেস করেই বসেছিল, ‘কোথায় এলাম রে?’ এর জবাব জানা ছিল না দুর্গার। ঠোঁট মোচড়ায় সে। অদূরে পাওয়ার গ্রিডের দিকে দেখিয়ে ফের প্রশ্ন অপুর, ‘ও গুলো কী রে?’ এ বারও একই ব্যঞ্জনা তার দিদির। তারপরই নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত অপুর মন্তব্য, ‘মা যদি ...’ আশঙ্কাটা অনুচ্চারিতই থেকে গিয়েছিল। ততক্ষণে দুর্গার কানে ধরা পড়ে গিয়েছে ক্রমশ এগিয়ে আসা শব্দটা। ভাইয়ের মুখ চেপে ধরে সে। তারপর? ১৯৫৫ সালে রিলিজ় করা ‘পথের পাঁচালি’ ছবির ওই দৃশ্য ৭০ বছর পরেও বিশ্ব চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অন্যতম সেরা হিসে গণ্য হয়। ঘন কালো ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে এগিয়ে আসা ট্রেনের দিকে কাশবন ঠেলে প্রাণপণে ছুটে চলেছে অপু–দুর্গা।

    উটে চেপে রামদেওরা স্টেশনের দিকে রওনা দিয়েছিল ফেলুদা। এমনই সময়ে তোপসের চিৎকার, ‘ফেলুদা ট্রেন!’ রাজস্থানের মরুপ্রায় জমির উপর দিয়ে ক্রমশ এগিয়ে আসেছে ট্রেনটা। নির্মেঘ, ঘন নীল আকাশে কালো ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে। মুহূর্তে কর্তব্য ঠিক করে নিয়ে উটচালককে সংক্ষিপ্ত নির্দেশ ফেলুদার, ‘ঘুমাইয়ে উট। ওহ ট্রেনকো রোকনা হোগা।’ তারপর? গায়ে কাঁটা দেওয়া ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজ়িক আর উট নিয়ে ট্রেন তাড়া করার সেই অবিস্মরণীয় দৃশ্য। ১৯৭৪ সালে রিলিজ় হওয়া সোনার কেল্লা সদ্য হাফ সেঞ্চুরি করেছে। পথের পাঁচালি ও সোনার কেল্লা, সত্যজিৎ রায়ের এই দুই বিখ্যাত ছবির অতি বিখ্যাত ট্রেনের দৃশ্য নিয়ে আঁকা পটের ছবি দেখা যাবে গোলপার্কের রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অফ কালচারের আগামী প্রদর্শনীতে। মার্চের ৬ থেকে ৮ — এই তিন দিন চলার কথা ওই প্রদর্শনীর।

    এই প্রদর্শনীর অন্যতম উদ্যোক্তা এবং নানা ধরনের দুর্লভ ও প্রাচীন সামগ্রীর সংগ্রাহক সৌভিক রায় বলেন, ‘রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অফ কালচারে একটি আর্ট অ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্স করানো হয়। এই প্রদর্শনী সেই কোর্সেরই অংশ। এ বার এই প্রদর্শনীতে আটজন শিল্প সংগ্রাহককে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। প্রদর্শনীতে দেখা যাবে কালীঘাটের পট, ছলমের ঘোড়া–হাতি, লক্ষ্মীর সরা, বাঁশি পুতুল এবং অন্য আরও নানা ধরনের আকর্ষক জিনিসপত্র।’ তারই মধ্যে প্রদর্শিত হবে সত্যজিৎ রায়ের বিখ্যাত দুই ছবির দু’টি দৃশ্য।

    পিংলার বাসিন্দা সন্ধ্যা চিত্রকরের বয়স খুব বেশি হলে ২১–২২ বছর। তরুণী এই শিল্পী জানাচ্ছেন, একটা সময়ে পটশিল্পীরা স্থানীয় সংস্কৃতির ধারক–বাহক হওয়ার পাশাপাশি সংবাদ পরিবেশনের কাজও করতেন। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘কোনও জায়গায় গিয়ে পটশিল্পীরা ‘নতুন’ কিছু দেখলে সেই নিয়ে গান বাঁধতেন এবং ছবি আঁকতেন। সেই গান ও ছবি নিয়ে অন্যত্র গেলে সেখানকার মানুষজন ‘নতুন’ বিষয়টা সম্পর্কে জানতে পারেন।’ রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অফ কালচারের পক্ষ থেকে শঙ্খ বসু এই প্রদর্শনী প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমাদের এখানে ভারতীয় শিল্পের মর্মানুসন্ধানের যে কোর্স করানো হয়, সেই কোর্স সম্পর্কে এই ধরনের প্রদর্শনীর ফলে সাধারণ মানুষ আরও বেশি করে জানতে পারবেন। আমাদের প্রদর্শনকক্ষটির নামকরণ জাতীয় অধ্যাপক সুনীতিকুমার চট্টোরাধ্যায়ের নামে করা হচ্ছে।’ একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, জাতীয় অধ্যাপকের স্ত্রী কমলা চট্টোপাধ্যায়ের তৈরি ট্যাপেস্ট্রির কাজও প্রদর্শিত হবে এই প্রদর্শনীতে।

  • Link to this news (এই সময়)