ট্যাংরার আবাসনে বুধবার গৃহবধূ ও এক কিশোরীর 'আত্মহত্যা' এবং ই এম বাইপাসে তাঁদেরই পরিবারের আহত তিন সদস্যকে নিয়ে রহস্য গভীর ভাবে দানা বাঁধছে।
এ দিন সকালে বাইপাসে মকুন্দপুরের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়া তিন জনকে উদ্ধার করাকে কেন্দ্র করে রহস্যের সূত্রপাত। পুলিশের দাবি, আহতরা তাদের জানান, তাঁরা সুইসাইড করতে বেরিয়ে দুর্ঘটনার মুখোমুখি হন। তাঁদের কাছ থেকে তাঁদের বাড়ির ঠিকানা জানতে পারে পুলিশ। ঠিকানা জানানোর পাশাপাশি আহতেরা জানান, তাঁদের বাড়ির তিন সদস্য ইতিমধ্যেই আত্মহত্যা করেছেন এবং তাঁদের দেহ ফ্ল্যাটেই পড়ে রয়েছে।
পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে ফ্ল্যাটের তিনটি ঘর থেকে দুই মহিলা ও এক কিশোরীর দেহ উদ্ধার করে। মৃতদের নাম সুদেষ্ণা দে (৩৯), রোমি দে (৪৪) এবং প্রিয়ংম্বদা দে (১৪)। কিন্তু পুলিশ যে এখনই এই আত্মহত্যার তত্ত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত তা কিন্তু নয়। কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মার কথাতেও তা স্পষ্ট। তাঁর মন্তব্য, ‘তিন জনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। দুই মহিলার দেহে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ময়নাতদন্তের পর বোঝা যাবে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ কী।
একই সঙ্গে পুলিশ কমিশনার জানান, গরফা থানা এলাকায় বুধবার একটা দুর্ঘটনা ঘটে। বাইপাসের ধারে একটি পিলারে ধাক্কা মারে তাঁদের গাড়ি। তাতে আহত হয়েছেন এই দুই মহিলার স্বামীরা। এই ঘটনার কারণ কী,অন্য কেউ এর সঙ্গে জড়িত,তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত এখনও একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে। আহতদের বয়ান যাচাই করে দেখা হচ্ছে। আত্মহত্যা না খুন, এই মুহূর্তে বলা মুশকিল। পুলিশ জানায়, দুর্ঘটনায় জখম তিন জনকেই স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
সূত্রের খবর, ট্যাংরার ২১/সি, অতুল সুর রোডের আবাসনে থাকতেন প্রণয় দে এবং প্রসূন দে। প্রণয়ের স্ত্রীর নাম সুদেষ্ণা। তাঁদের মেয়ের নাম প্রিয়ংম্বদা। আর, প্রসূনের স্ত্রীর নাম রোমি। তাঁদের শিশু পুত্রের নাম প্রতীপ। প্রণয় ও প্রসূনের চামড়ার জিনিসের ব্যবসা রয়েছে।
আহতরা পুলিশকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, আর্থিক দেনার কারণে তাঁরা সকলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পুলিশের একটি সূত্র বলছে, মঙ্গলবার রাতে প্রত্যেকেই ঘুমের ওষুধ খেয়েছিলেন। এখানেই প্রশ্ন, তা হলে দুই গৃহবধূর হাতের শিরা কেন কাটা ছিল? তাঁদের মধ্যে রোমি দে-র গলায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। সেই ক্ষত কী করে হলো? আত্মহত্যার বিষয় থাকলে শিশুপুত্রকে নিয়ে প্রণয় ও প্রসূন কেন গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিলেন? এরকম একগুচ্ছ প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে ট্যাংরা কাণ্ডে।
দুই গৃহবধূ ও ওই কিশোরী কি আত্মহত্যা করেছেন? নাকি তাঁদের খুন করা হয়েছে? খুন করে পালাতে গিয়েই দুই গৃহবধূর স্বামী ও এক কিশোরের গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে? নাকি তাঁরাও আত্মহত্যার চেষ্টা করছিলেন? তদন্তে কলকাতা পুলিশ।
তথ্য সহায়তা: অর্পিতা হাজরা