মিলেছে হজরত লস্করের কাটা মুণ্ড। কিন্তু এখনও দত্তপুকুর কাণ্ডে মোটিভ অর্থাৎ খুনের উদ্দেশ্য নিয়ে ধোঁয়াশা। ঘন ঘন বয়ান বদলাচ্ছে এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত জলিল গাজি এবং তার স্ত্রী সুফিয়া। স্বাভাবিকবাবেই ধন্ধে তদন্তকারীরা।
হজরতের মোবাইল ফোন খুঁজে পাওয়ার জন্য বুধবার দত্তপুকুরে খালের জল ছেঁচে বার করতে শুরু করেছে পুলিশ। ওই খালেই মোবাইলটিও ফেলার কথা জেরায় কবুল করেছে জলিল। এ দিন সুফিয়া খাতুনকে বারাসত আদালতে তোলা হয়। তাঁকে ১২ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। কোর্ট থেকে লক আপে নিয়ে যাওয়ার সময়ে সুফিয়া জানান, হজরত খুনের কারণ শুধুমাত্র জলিলই জানে। সবমিলিয়ে দত্তপুকুরে হজরত মার্ডার কেস নিয়ে জটিলতা আরও বাড়ছে।
এ দিকে জলিল এবং সুফিয়াকে জেরা করে বেশ কিছু হাড়হিম করা তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা। হজরতকে খুন করার পর জলিল এবং সুফিয়া নিশ্চিন্তে বাড়ি চলে যায়। ঘটনার দিন হজরত যে মদ কিনে এনেছিল খুনের পর তাই খেয়েছিল তারা। যেহেতু ধড় থেকে মুণ্ড আলাদা করে দেওয়া হয়েছিল, তাই হজরতের দেহ যে কেউ শনাক্ত করতে পারবে না, সেই বিষয়ে একপ্রকাশ নিশ্চিত ছিল জলিল।
কিন্তু তাদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায় হজরতের স্ত্রী। তিনি বারবার সুফিয়া এবং জলিলকে ফোন করে হজরতের খোঁজ নিতে থাকেন। কারণ হজরত বাড়ি থেকে বেরনোর সময়ে জানিয়েছিলেন, তিনি জলিলের বাড়ি যাচ্ছেন।
হজরতের স্ত্রীকে থানায় মিসিং ডাইরি করার পরামর্শও দেন জলিলই। এর পর সে নিজে জম্মুকে পালিয়ে যায়। হজরত দেহ শনাক্ত হওয়ার পরও সুফিয়া নিশ্চিত ছিল পুলিশ হজরতের কাটা মুণ্ড কোনওদিন উদ্ধার হবে না। সেই কারণে তদন্তের মোড় ঘোরাতেই সে চুরির গয়নার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে বিবাদ থেকে শুরু করে একাধিক গল্প ফেঁদেছিল। কিন্তু জলিল গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাকে জেরা করে সেই কাটা মুণ্ড উদ্ধার করে পুলিশ।
হজরতকে খুন করবার জন্য জলিল সুফিয়াকে দিয়ে ফোন করিয়ে তাকে ডেকেছিল বামনগাছির বাড়িতে। ঘটনার রাতে জলিল হজরতকে বলেছিল, তারা তিনজনে সারারাত পার্টি করবে। আর সেই জন্য হজরত বামুনগাছিতে নেমে একটি দোকান থেকে মদ কিনে জলিলের বাড়িতে যায়।
২ ফেব্রুয়ারি রাত ৭টা ২০ মিনিটে জলিলের অন্য বাড়িতে যাওয়ার জন্য রওনা দেয় হজরত। হজরতকে খুন করার জন্য সন্ধ্যা থেকেই জলিল তার কাছে থাকা অস্ত্রে ধার দিয়েছিল। হাত-পা পুড়িয়ে দেওয়ার জন্য জলিল বিকেলেই কাজিপাড়ার একটি দোকান থেকে কেরোসিন তেল কিনে এনেছিল। পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক সে খুন করে হজরতকে। তারপর খুন করে ধড় এবং মুণ্ড আলাদা করে দেওয়া হয় এবং দেহ হাত-পা বেঁধে পুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।