সন্তানের বিপদে মায়ের মন কাঁদবেই। প্রাণ বাজি রেখে বিপদের হাত থেকে সন্তানকে রক্ষা করতে মা ঝাঁপিয়ে পড়বে। এই চিরন্তন সত্য শুধু মনুষ্য সমাজে নয়, প্রাণিকূলেও বিরাজমান। তার প্রমাণ মিলল ঝাড়গ্রামে। তিন ফুট গভীর ড্রেনে আটকে যাওয়া শাবককে উদ্ধার করল মা হাতি।
আকার-আয়তনে হাতি অনেকটাই বড়। ক্ষমতাও ততোধিক। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে শারীরিক সক্ষমতার থেকেও বেশি কার্যকরী হয় বুদ্ধি। সেটাই করে দেখাল ঝাড়গ্রামের তিনটে হাতি। বুধবার সকালে ২৫টি হাতির একটি পাল রাস্তা পেরিয়ে জঙ্গলে ফিরছিল। সব হাতি রাস্তা পেরিয়ে গেলেও রাস্তার পাশে থাকা আড়াই-তিন ফুটের একটি কংক্রিটের ড্রেনে ঢুকে যায় একটি শাবক। সঙ্গে সঙ্গেই নিজের সন্তানকে উদ্ধারের চেষ্টা শুরু করে মা হাতি। ততক্ষণে অন্য হাতিগুলি জঙ্গলেঢুকে পড়েছে। তবে মা হাতিকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে অন্য একটি হাতি।
ততক্ষণে শাবক হাতিটির ড্রেনে পড়ে যাওয়ার পৌঁছে গিয়েছে বন দপ্তরের কাছে। তাকে ড্রেন থেকে তুলতে জেসিবি পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। এ দিকে নিজের শাবককে উদ্ধারের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যায় মা হাতি। জঙ্গল থেকে ফিরে আসে অন্য আরও একটি বড় হাতি। তিনজনে মিলে শুঁড়ের সাহায্যে প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিটের চেষ্টায় ড্রেন থেকে উদ্ধার করে হস্তি শাবককে। তার পরে তারা চলে যায় জঙ্গলে।
জানা গিয়েছে, লালগড় রেঞ্জের ঝিটকার জঙ্গলে প্রায় ৭ দিন ধরে ৭০টি হাতির একটি পাল রয়েছে। দলটি দুটো ভাগে রয়েছে। একটি দলে রয়েছে ২৫টি হাতি, অন্যটিতে বাকি ৪৫টি। মঙ্গলবার রাত ১২টার নাগাদ ২৫টি হাতির দল জঙ্গল থেকে বেরিয়ে খাবারের সন্ধানে হানা দেয় নেতাই গ্রামের দিকে। কংসাবতী নদীর তীরে নেতাই, ডাইনটিকরী, কাঞ্চনডাঙা, ভুলাডাঙা, তাঁতিশোল, সিজুয়া-সহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক পরিমাণে ফুলকপি, বাঁধাকপি ও আলুর চাষ হয়। জমিতে নেমে সারারাত ধরে ফসল খাওয়ার পরে ভোরের আলো ফুটতেই সকাল বেলায় জঙ্গলে ফিরছিল হাতির দলটি। তখনই রাস্তা পারাপারের সময় ড্রেনে পড়ে যায় শাবকটি।
লালগড়ের রেঞ্জ অফিসার লক্ষীকান্ত মাহাতো বলেন, ‘ঝিটকার জঙ্গল থেকে বেরিয়ে ২৫টি হাতির একটি দল নেতাইর দিকে চলে গিয়েছিল। সকালে তারা জঙ্গলের দিকে ফিরছিল। সেই সময়ে একটি বাচ্চা হাতি রাস্তা পারাপারের সময় রাস্তার পাশে থাকা ড্রেনে পড়ে যায়। মা হাতি চেষ্টা করছিল উদ্ধারের জন্য। কিন্তু পারছিল না। তখন আমরা উদ্ধারের জন্য জেসিবি রেডি করছিলাম। তারপরেই দেখি জঙ্গল থেকে আরও দুটি হাতি এসে বাচ্চাটিকে ড্রেন থেকে শুঁড়ের সাহায্যে তুলে আনে এবং পরে জঙ্গলে চলে যায়। এখন হাতির দলটি কামরাঙ্গির জঙ্গলে রয়েছে। হাতির গতিবিধির উপর প্রতিনিয়ত নজর রাখা হচ্ছে।’