শীতল চক্রবর্তী ■ বালুরঘাট
সকাল সাড়ে দশটা। অন্যদিনের মতোই ব্যাগ কাঁধে নিয়ে স্কুলে এসেছে খুদে পড়ুয়ারা। কিন্তু এসে দেখে, স্কুলের গেটে তালা। শিক্ষকরা তখনও আসেননি। নিজেদের মধ্যে কিছুটা খুনসুটি করে রাস্তার পাশেই বই খুলে বসে পড়ে তারা। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তপনের চকবলরাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এই দৃশ্য যেন রোজনামচা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ঘটনায় প্রধান শিক্ষককে শোকজ় করা হয়েছে। তপন ব্লকের গোফানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের এই স্কুলের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৩৬।
নিয়ম অনুযায়ী সকাল সাড়ে দশটায় স্কুল খোলার কথা। ১০টা ৪৫ মিনিটের মধ্যে জাতীয় সঙ্গীত হওয়ার কথা। কিন্তু অভিযোগ, প্রায় প্রতিদিনই ১১টা পার হয়ে যায়, তবু স্কুলের দরজা খোলে না। তালা ঝুলতে দেখলেই মাটিতে বসে যায় খুদেরা। বই খুলে নিজেদের মতো পড়াশোনা শুরু করে। মঙ্গলবার স্কুলে গিয়েও একই দৃশ্যের দেখা মিলেছে।
চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ইশা হেমব্রম বলে, ‘অনেকক্ষণ আগেই এসেছি। স্কুল খোলেনি, শিক্ষকরা আসেননি। তাই বই খুলে পড়ছি।’ প্রথম শ্রেণির এক ছাত্রের কথায়, ‘মাস্টারমশাইরা রোজ দেরি করে আসেন। কখনও আসেন, কখনও আসেন না। এলে পড়াশোনা হয়, না হলে বাড়ি চলে যাই।’ এই স্কুলে শিক্ষকের সংখ্যা তিন। তবে মঙ্গলবার দেখা মিলল না প্রধান শিক্ষক সম্রাট সরকার ও আরও এক শিক্ষকের। অন্য এক শিক্ষক নজরুল শেখ হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বলেন, ‘প্রতিদিনই ঠিক সময়েই আসি, তবে আজ একটু দেরি হয়েছে।’
স্কুলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রধান শিক্ষক ব্যাঙ্কের কাজে ব্যস্ত। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, প্রায় প্রতিদিনই কেন এই অনিয়ম? এই ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। সংসদের চেয়ারম্যান সন্তোষ হাঁসদা বলেন, ‘ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রধান শিক্ষককে শোকজ় করা হয়েছে। স্কুল পরিদর্শককে প্রকৃত অবস্থা জানতে স্কুলে পাঠানো হয়েছে।’