দফায় দফায় বহু লোকের আনাগোনা, বাড়ির দোতলায় রক্তের দাগ, ট্যাংরা-কাণ্ডে প্রশ্ন অনেক
আজকাল | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: রুবির মোড়ের কাছে একটি গাড়ি দুর্ঘটনা এবং ট্যাংরায় একই পরিবারের তিনজনের রহস্যমৃত্যু। এই দুই ঘটনার যোগসূত্র যে এত রহস্যময় হতে চলেছে তা ভাবতেও পারেননি পুলিশের তদন্তকারী আধিকারিকরা।
বুধবার ভোর চারটে নাগাদ ইএম বাইপাসের উপর কবি সুকান্ত মেট্রো স্টেশনের পিলারে ধাক্কা মারে একটি চার চাকা গাড়ি। এক নাবালক-সহ আহত হন তিনজন। আহতদের একজনের কাছে থেকে ট্যাংরার একটি বাড়ির ঠিকানা মেলে। সেই ঠিকানায় গিয়ে পুলিশ হাজির হতেই চক্ষু চড়কগাছ। চারতাল 'চিত্ত ভবন'-এর তিন তলার তিনটি ঘরে পড়ে রয়েছে তিনটি দেহ। দু'জন মহিলা এবং একজন কিশোরী। মহিলাদের হাতের শিরা কাটা। কিশোরীর মুখ থেকে গ্যাঁজলা বেরিয়ে গিয়েছে। দেহ উদ্ধারের সূত্র ধরে আহত ব্যক্তিদের একজনকে জিজ্ঞাসা করতেই জানা যায়, পরিবারের সকলে মিলে তাঁরা আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। কারণ হিসেবে জানা আর্থিক অনটন। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, আহত দুই ব্যক্তির নাম প্রণয় দে এবং প্রসূন দে। তাঁদের চামড়ার ব্যবসা ছিল। তাঁদের স্ত্রী সুদেষ্ণা দে এবং রোমি দে-র দেহ বুধবার সকালে উদ্ধার হয়। ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হয় ট্যাংরা থানার পুলিশ এবং লালবাজার হোমিসাইড শাখার আধিকারিকেরা। আসেন কলকাতা পুলিশের কমিশনার মনোজ বর্মা এবং যুগ্ম নগরপাল (অপরাধদমন শাখা) রূপেশ কুমার। আনা হয় স্নিফার ডগ এবং ফরেনসিক টিমকেও।
বুধবার সকালে কমিশনার মনোজ বর্মা ঘটনাস্থল থেকে বলেন, ''তিনটি মহিলার মৃতদেহ উদ্ধার হয় তার মধ্যে একজন কিশোরী। দু'জনের দেহে ক্ষত ছিল। ময়নাতদন্তের পর বোঝা যাবে। বুধবার সকালে গরফা থানা এলাকায় একটি দুর্ঘটনার সূত্র ধরে ট্যাংরায় মৃতদেহ উদ্ধার হয়। দু'টি ঘটনার মধ্যে যোগসূত্র রয়েছে। খুন না কি আত্মহত্যা তা এখনও স্পষ্ট নয়। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা রয়েছেন ঘটনাস্থলে। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হবে।'' সেই সিসিটিভি ফুটেজ সামনে এসেছে। সেই ফুটেজ এবং এলাকার বাসিন্দাদের বয়ান থেকে কয়েকটি প্রশ্ন উঠে আসছে-
১) চারতলা বাড়ির তিনতলার তিনটি ঘর থেকে তিনটি দেহ উদ্ধার হয়েছে। কিন্তু বাড়ির দোতলায় রক্তের দাগ কেন? ২) দুর্ঘটনাগ্রস্থ গাড়ির পিছনের সিটে অনেকগুলি ব্রেসলেট পাওয়া গিয়েছে। সেগুলি কাদের? ৩) সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, রাতে তড়িঘড়ি গাড়িতে উঠছে দুই ব্যক্তি ও এক কিশোর। বাড়ি থেকে বেরনো ও দুর্ঘটনার মধ্যে ঘণ্টা তিনেকের ফারাক রয়েছে। ওই সময় তাঁরা কোথায় ছিলেন? ৪) আহত এক ভাইয়ের দাবি তাঁরাও আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন। তাহলে গাড়ির ভিতর সকলে সিটবেল্ট পড়েছিলেন কেন? ৫) স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার ১৪-১৫ জন এসেছিলেন ওই বাড়িতে। বেল বাজালেও কেউ সাড়া দেননি। কেন? ৬) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কিশোরের হাতে একাধিক ক্ষত চিহ্ন রয়েছে। সেগুলি কীভাবে হল? ৭) প্রণয় এবং প্রসূন দাবি করেছেন, ঘুমের ওষুধ খেয়ে ছয় জন একসঙ্গে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, ঘুমের ওষুধ খাওয়ার পর কেন তাঁরা গাড়ি নিয়ে বেরোলেন? ৮) কেনই মহিলাদের হাতের শিরা কাটা? তাহলে কী তিনজনকে খুন করে গাড়ি নিয়ে পালাতে গিয়েই কি বাইপাসের দুর্ঘটনা?
এরকমই নানা প্রশ্ন ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। ট্যাংরা-রহস্য কোন দিকে মোড় নেয় তা-ই দেখার।