• ‘ভালোবাসতে গেলে জীবন দিতে হবে’, স্ত্রীকে ভিডিয়ো কলে ধরে গলায় ফাঁস মালদার যুবকের
    এই সময় | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • স্ত্রী বলেছিলেন ভালোবাসার প্রমাণ দিতে হবে জীবন দিয়ে। প্রমাণ দিলেন স্বামী। অভিযোগ, তা মোবাইল ফোনের ওপারে বসে দেখলেন স্ত্রী। আট মাসও হয়নি বিয়ের। অভিযোগ, স্ত্রীর সেই কথা রাখতেই স্ত্রীকে ভিডিয়ো কলে ধরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হলেন সুরজিৎ হালদার নামে ২৩ বছরের যুবক। এই ঘটনায় রীতিমতো শোরগোল মালদায়। পুরাতন মালদা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে যুবকের পরিবার।

    মঙ্গলবার রাত ১১টা নাগাদ পুরাতন মালদা থানার সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ২ নম্বর বিমল দাস কলোনি এলাকার ঘটনা। রাতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় সেই ভিডিয়ো (যদিও ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি এই সময় অনলাইন)। রাতেই দেহ উদ্ধার করে মালদা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়।

    সুরজিৎ পেশায় দর্জি ছিলেন। ইংরেজবাজার শহরের দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন মার্কেটের একটি পোশাকের শোরুমে দর্জির কাজ করতেন। তাঁর স্বাধীন হালদার ফাস্টফুড বিক্রি করেন। সাহাপুর ঝন্টু মোড়ে তাঁর একটি দোকান রয়েছে।

    পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাত ১১টা নাগাদ দোকান বন্ধ করে স্বাধীন হালদার এবং তাঁর স্ত্রী মিঠু হালদার বাড়ি ফেরেন। ঘরে এসে দেখেন, ছেলের ঘরের দরজা বন্ধ। জানলা দিয়ে উঁকি মারতেই দেখেন সিলিংয়ে গামছা জড়িয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলছে ছেলে। সামনে মোবাইল খোলা। সবটা রেকর্ড হচ্ছে। এর পরই চিৎকার চেঁচামেচিতে সারা পাড়ার লোক এসে হাজির হন।

    মৃতের বাবা স্বাধীন হালদার জানান, আট মাস আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় মুর্শিদাবাদের নিমতিতার এক তরুণীর সঙ্গে ছেলের পরিচয়। বিয়ে করলেও বেশি দিন স্বামী স্ত্রী একসঙ্গে থাকেননি। স্বাধীন জানান, ২ মাসের মধ্যেই বৌমা বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু স্বাধীন হালদারের অভিযোগ, বৌমা নানা ভাবে ছেলেকে নির্যাতন করত। তাঁর অনুমান, বৌমার অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্কও রয়েছে।

    সুরজিতের বাবার দাবি, তাঁর ছেলেকে নানা ভাবে ব্ল্যাকমেল করা হতো। ছেলে তা মেনে নিতে পারছিল না। শ্বশুরবাড়ির লোকজন নানা ভাবে হেনস্থা করত। এরপর মঙ্গলবার রাতে ছেলের এই পরিণতি দেখেন। তিনি জানান, সেই সময় মোবাইলে ভিডিয়ো কল চলছিল। বৌমা সেই ফোন করেছিল বলে দাবি করেন সুরজিতের বাবা। তাঁর বক্তব্য, একবার ফোন করে তাঁদের জানালে, এ ভাবে ছেলেকে মরতে হতো না।

    সুরজিতের দুই দিদি। এক দিদি মৌসুমী হালদার বলেন, ‘বিয়ের পর থেকেই অন্য ছেলের সঙ্গে ভাব ছিল ভাইয়ের বৌয়ের। যার জন্য দু’মাসের মধ্যেই বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। বারবার ভাইকে মরে যাওয়ার কথা বলতো। ভাই আমাদের মোবাইলে রেকর্ডিং করা সে কথাও শুনিয়েছিল। ও দিন রাতেও প্রায় ২০ মিনিট ধরে ভিডিও কল চলে ওদের। ওর সামনেই গলায় ফাঁস দিয়ে সুসাইড করে ভাই। রেকর্ডিংয়ে শোনা গিয়েছে, ওর বৌ বলছে, ভালোবাসতে গেলে জীবন দিতে হবে। ভালবাসা প্রমাণ করে দেখাও। এ কথা শুনে তো আমরা তাজ্জব হয়ে গিয়েছি।’

    পুরাতন মালদা থানার পুলিশ জানিয়েছে, ভিডিও কল করে সাহাপুরের এক তরুণের আত্মহত্যার ঘটনার পর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। মৃতের স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা, মানসিক নির্যাতনের লিখিত নালিশ জানানো হয়েছে। পুরো বিষয়টি নিয়ে তদন্তের জন্য মুর্শিদাবাদ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

  • Link to this news (এই সময়)