উঠছে না চাষের খরচটুকুও, টমেটোর কেজি প্রতি দাম মাত্র এক টাকা, মাথায় হাত কৃষকদের ...
আজকাল | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
মিল্টন সেন, হুগলি: দাম ঠেকেছে তলানিতে। মাত্র এক টাকা কিলো। জমি থেকে তোলার খরচ উঠছে না। জমিতেই শুকিয়ে নষ্ট হচ্ছে। মাথায় হাত। টমেটো গাছ কেটে ফেলার কথাও ভাবছেন কেউ কেউ। অসময়ে চাষ করার পরামর্শ দিচ্ছেন উদ্যান পালন দপ্তর।
হুগলি জেলায় মোট টমেটো চাষের জমির পরিমাণ ১৪ হাজার ১১ হেক্টর। উৎপাদিত টমেটোর পরিমাণ প্রায় পঁচিশ হাজার মেট্রিকটন। হুগলি জেলার বলাগড়, পান্ডুয়া, পোলবা-দাদপুর, চন্ডীতলা সহ একাধিক ব্লকের চাষের জমিতে এখনও গাছে রয়েছে টমেটো। হুগলি জেলায় উৎপাদিত টমেটো রপ্তানি করা হয় সংলগ্ন একাধিক ভিন রাজ্যে। ব্যবসায়ী মহলে খবর, বর্তমানে সেই টমেটো আর যাচ্ছে না। তাই সমস্যার মুখে পড়েছেন কৃষকরা। এক বিঘা টমেটো চাষ করতে প্রায় পঁচিশ হাজার টাকা খরচ হয়ে থাকে। অথচ বর্তমানে উৎপাদিত সেই টমেটো বিক্রি করে দশ হাজার টাকাও মিলছে না। যা অবস্থা জমিতে ফলন্ত গাছ শুকিয়ে নষ্ট হচ্ছে। কারন, টমেটো বিক্রি করে জমি থেকে টমেটো তুলে বাজারে নিয়ে যাওয়ার খরচটাও উঠছে না। টমেটোর মত একই অবস্থা হাইব্রিড শশার। শশা দু টাকা কিলো দরে বিকোচ্ছে। সীম মটরশুঁটি, লাউ সব সবজির পাইকারি দাম কমেছে অনেকটাই। ফলে কৃষকদের চাষের খরচ উঠছে না। এবছর শীত কালীন সবজি চাষের জন্য ভালো আবহাওয়া ছিল। ঝড় বৃষ্টিতে ক্ষতি হয়নি। যার ফলে উৎপাদন বেশ ভালই হয়েছে।
জেলা উদ্যান পালন দপ্তরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর শুভদীপ নাথ জানিয়েছেন, যারা সব্জি চাষ করে সারা বছর, তাদের অসময়ের চাষে উৎসাহী করা হচ্ছে। এছাড়া পলি হাউস তৈরী করে চাষ করার ব্যবস্থাও রয়েছে। এই পলি হাউসে সাবসিডি দেওয়া হচ্ছে ৫০ শতাংশ। দু'রকম পদ্ধতিতে চাষ করার বিষয়ে কৃষকদেরকে বোঝানোর চেষ্টা চলছে। খোলা মাঠে চাষ এবং আচ্ছাদনের মধ্যে চাষ। যাতে অসময়ের চাষ করে কৃষক উৎপাদিত ফসলের উপযুক্ত মূল্য পায়। পাশাপাশি যারা সফলভাবে চাষ করছেন, সেখানে নিয়ে গিয়ে কৃষকদের হাতে কলমে বিষয়টি দেখানো হচ্ছে। সামনে ২০ থেকে ২২ ফেব্রুয়ারী নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে রয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান। সেখানে হুগলি জেলা থেকে আড়াইশো কৃষককে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।সেখানে অসময়ের চাষ সম্পর্কিত প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা হবে। সেটা যাতে কৃষকরা জানতে পারেন, তার জন্যই এই চেষ্টা।
আলুর ক্ষেত্রেও অনেক সময় দেখা যাচ্ছে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি চাষ করা হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে কৃষকরা অনেক সময় দাম পাচ্ছেন না। শুভদীপ বলেছেন, তাঁদের তরফে প্রচার করা হচ্ছে আলু চাষের জমির পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে মজুদ করা যাবে এরকম কিছু ফসল নিয়ে কাজ করতে হবে। যেমন হাইব্রিড গাজর খুব লাভজনক চাষ। যেটা আলুর সঙ্গে উঠবে এবং পুজোর সময় বিক্রি করা যাবে। এটা আলুর থেকে তিনগুণ বেশি দামে বিক্রি হবে।
আগাম টমেটো চারা দেওয়া হয়েছিল। তা অনেকেই নিতে পারেননি। হিট টলারেন্স টমেটো চারা বিলি করা হয়েছে। এই টমেটো উঠবে এপ্রিল মাসে। যখন বাজারে টমেটো শেষ হয়ে যাবে। ফলত টমেটোর দাম বেশি পাওয়া যাবে। কৃষকদের বলা হচ্ছে যে কোনও ফসল চাষের ক্ষেত্রে আগাম চাষের চেষ্টা করতে। তা নাহলে সিজনের শেষের দিকে চাষ করুন। সাহায্যের জন্য রাজ্যে একমাত্র হুগলি জেলার কৃষি খামারে সবজি উৎকর্ষ কেন্দ্র রয়েছে। সেখান থেকে কৃষকরা গাছের চারা যেমন সংগ্রহ করতে পারবেন, পাশাপাশি তাঁরা চাষ সম্পর্কে হাতে কলমে বিস্তারিত প্রশিক্ষণও নিতে পারবেন।ছবি পার্থ রাহা।