আট মাসের মধ্যে জলজ্যান্ত দুই ছেলে মেয়েকে হারিয়ে দিশাহারা বাবা, মা। এখনও মেয়ের মৃত্যুশোক ভুলতে পারেননি হুগলির চাঁপদানির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের জালান পরিবার। এরই মধ্যে বুধবার বিনা মেঘে বজ্রপাত। স্কুলে এক সহপাঠীর ঘুষিতে প্রাণ গেল ১৫ বছরের ছেলে অভিনব জালানের। কী করে কী হলো, ভেবেই পাচ্ছেন না বাবা, মা।
চাঁপদানি আর্য বিদ্যাপীঠের দশম শ্রেণীর ছাত্র ছিল অভিনব। রোজের মতো বুধবারও সকালে স্কুলে গিয়েছিল। এখনও অভিনবর মা বিশ্বাস করতে পারছেন না, ছেলের সঙ্গে সেই ছিল তাঁর শেষ দেখা। তার বাবা মানতে পারছেন না, এ সকাল তাঁদের জীবনে রাতের চেয়েও কালো অন্ধকার নিয়ে এসেছে।
এলাকা সূত্রে খবর, হুগলির চাঁপদানি পুরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রোজি জালান ও গণেশ জালানের দুই সন্তান ছিল। বছর কুড়ির অনামিকা ও পনেরো বছরের অভিনব। গত বছর জুন মাসে স্থানীয় একটি মাঠে হাঁটার সময় হঠাৎ করেই মাঠে পড়ে গিয়ে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন অনামিকা। চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে জানিয়ে দেন, মেয়ে আর বেঁচে নেই। সম্ভবত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই তাঁর মৃত্যু হয়েছিল।
কোনও মতে সেই শোক বুকে চেপেই দিন কাটাচ্ছিলেন রোজি ও গণেশ। মনকে বুঝিয়েছিলেন, ছেলের মুখের দিকে চেয়ে তাঁদের ঠিক থাকতে হবে। কিন্তু বছর ঘুরল না, ফের কোল খালি মায়ের। বুধবারের ঘটনায় পুত্রশোকে কাতর বাবা-মা।
গণেশের দুধের ব্যবসা রয়েছে। মাঝে মধ্যেই নানা জায়গায় যেতে হয় তাঁকে। তবে সন্তানদের গুরুত্ব তাঁর কাছে সবার আগে। এলাকার লোকজন জানান, অভিনব দিদিকে হারানোর পর কেমন একটা হয়ে গিয়েছিল। সেই শোক কঠিন আঘাত করেছিল তার মনেও। আর বুধবার আরও এক আঘাতে শেষ ১৫ বছরের এই কিশোরও।
অভিনবর তুতো দাদা আয়ুষ জালান বলেন, যে স্কুলে এই ঘটনা ঘটেছে, আর কি সেই স্কুলে অন্য ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনা করার জন্য যেতে পারবে? বাবা, মায়েরা কোনও ভরসায় পাঠাবেন ছেলে, মেয়েকে?
স্কুলের প্রধান শিক্ষক বীরেন্দ্রকুমার ঝাঁ বলেন, ‘অভিনবর দিদি আমারই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রী ছিল। একদিন মাঠে হাঁটার সময় পড়ে গিয়ে তার মৃত্যু হয়। খুব ভালো ছাত্রী ছিল। আজ অভিনবকে হারানোর যে কষ্ট, তা বলে বোঝাতে পারব না। আমার কাছে খুবই মর্মান্তিক বিষয় একই পরিবারের ভাই বোনের মৃত্যু। বোনের মৃত্যু হয়েছে জুন মাসে, আর ভাইয়ের মৃত্যু হলো ফেব্রুয়ারিতে।’
বুধবার সহপাঠীর ঘুষিতে মৃত্যু হয় অভিনবর। দুপুর ১টা নাগাদ এক সহপাঠীর সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় বলে অভিযোগ। সেই সময় সহপাঠীর ঘুষিতেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে অভিনব। তড়িঘড়ি স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও তাকে বাঁচানো যায়নি। চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ইতিমধ্যেই ভদ্রেশ্বর থানার পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। আর মেয়েকে হারানোর পর বছর ঘোরার আগেই ছেলেকে হারিয়ে অকূল পাথারে জালান দম্পতি।