রাজমিস্ত্রি থেকে কর্মাধ্যক্ষ, ফুলেফেঁপে পদ্মনেতা, তোলপাড় নন্দীগ্রাম
বর্তমান | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: রাজমিস্ত্রি থেকে রাতারাতি ৩০ লাখি জেসিবি-র মালিক হয়েছেন নন্দীগ্রামের বিজেপি নেতা সুখেন্দু দাস। তিনি নন্দীগ্রাম-১ পঞ্চায়েত সমিতির খাদ্য ও সরবরাহ স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ। দলের নেতার এই বাড়বাড়ন্ত নিয়ে নন্দীগ্রামের বিজেপি নেতাকর্মীরাই সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলে দিয়েছেন। বুধবার সকাল থেকেই এনিয়ে তোলপাড় নন্দীগ্রাম। দলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপেও নিজেদের মধ্যে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি অব্যাহত। কটাক্ষের সুরে বিজেপি নেতাদের কেউ কেউ পোস্ট করেছেন, ‘আগামী দিনেও সুখেন্দু দাসকে টিকিট দেওয়া হোক। ভবিষ্যতে নিজের আরও উন্নতি করতে পারবেন।’ মঙ্গলবার রাত থেকেই নন্দীগ্রামের একের পর এক বিজেপি নেতানেত্রী সুখেন্দু দাস ও তাঁর কেনা জেসিবির ছবি দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করতে শুরু করেন। প্রাক্তন সাংসদ দিলীপ ঘোষ ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত নন্দীগ্রামের নেতা দেবরাজ দাস, আরেক নেত্রী সুস্মিতা মাইতি সহ আরও কয়েকজন এই ইস্যুতে পোস্ট করেন। প্রত্যেকের বক্তব্য, সুখেন্দু দাস একসময়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। ২০২৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটের পর তিনি পঞ্চায়েত সমিতির খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ হন। এত অল্প সময়ের মধ্যে কীভাবে এত টাকা মালিক হলেন? একটি জেসিবি-র মূল্য ৩০ থেকে ৩৫ লক্ষ টাকা। তিনি একটি নতুন জেসিবি কিনে ফেলেছেন। এত টাকা এল কোথা থেকে?
বিষয়টি শুধু ফেসবুকের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের নিজেদের গ্রুপেও এনিয়ে পোস্ট ও পাল্টা পোস্ট চলে। একটা সময়ে কয়েকজন বিরক্ত হয়ে গ্রুপ ত্যাগ করেন। এনিয়ে লড়াইয়ে থাকা তিন-চারজনকে রিমুভও করে দেওয়া হয়। আচমকা এরকম একটি ঘটনায় হাতে গরম ইস্যু পেয়ে যায় তৃণমূলও। সোশ্যাল মিডিয়ায় শাসক দলের পক্ষ থেকেও এনিয়ে কটাক্ষ ধেয়ে আসে। দেবরাজ দাস, সুস্মিতা মাইতিদের দাবি, গোটা ঘটনার তদন্ত হওয়া উচিত। কীভাবে এত অল্প সময়ের মধ্যে ওই নেতা বিত্তশালী হলেন সেটা প্রকাশ্যে আসা উচিত।
জানা গিয়েছে, সুখেন্দু দাস দীর্ঘদিন ধরে রাজমিস্ত্রির কাজ করেছেন। তারপর রাজমিস্ত্রিদের নিয়ে একটি গ্রুপ বানিয়ে লেবার কন্ট্রাক্টর হয়ে ওঠেন। এই কাজের মধ্যে থাকতে থাকতেই আচমকা একটি জেসিবি কিনে দলের নেতাকর্মীদের নিশানায় চলে গিয়েছেন। তাঁকে ঘিরে দলের মধ্যে কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। এই ঘটনার পর দল কী ব্যবস্থা নেয় সেদিকে তাকিয়ে আছেন সাধারণ কর্মী-সমর্থকরা।
এনিয়ে খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ সুখেন্দু দাস বলেন, আমার ৪৭টি ব্যাঙ্ক লোন আছে। এখন দু’-তিন লক্ষ টাকা দিলে জেসিবি বাড়িতে পৌঁছে দেয়। আমি ঋণ করে ওটা কিনেছি। এনিয়ে কেন এত কথা হচ্ছে বুঝতে পারছি না। যাঁরা এনিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করছেন তাঁদের বলব, পারলে আমার ব্যাঙ্কের কিস্তি মিটিয়ে দিন। আমি তিলে তিলে পরিশ্রম করে সম্পদ বাড়িয়েছি। এতে ঈর্ষা করার কী আছে? তৃণমূল কংগ্রেস নেতা তথা জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ সামসুল ইসলাম বলেন, বিজেপি মানেই দুর্নীতি। এই ঘটনা থেকে সেটা আরও একবার প্রমাণ হয়ে গেল। নিজেদের দলের লোকজন এনিয়ে সরব হওয়ার পরও নেতৃত্ব চুপ। এতেই স্পষ্ট, বিজেপি দুর্নীতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ায়। (সুখেন্দু দাস ও তাঁর জেসিবি।-নিজস্ব চিত্র)