সংবাদদাতা, বোলপুর: প্রোমোটারদের দখলে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি ‘আবাস’। সম্প্রতি সেই ঐতিহ্যবাহী বাড়ি ভাঙ্গা শুরু হয়েছে। সেখানেই বহুতল আবাসন নির্মাণ করা হবে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। ঠাকুর পরিবারের ঐতিহ্যবাহী স্মৃতিকে এভাবে ধ্বংস করাকে কেন্দ্র করে নিন্দার ঝড় উঠেছে শান্তিনিকেতনে। বিষয়টি জানাজানি হতেই নড়েচড়ে বসেছে জেলা প্রশাসন। ওই বাড়ি বা সম্পত্তি হেরিটেজের আওতাভুক্ত হলে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনটাই প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে। বুধবার মাপজোখও শুরু করেছে মহকুমা ভূমিদপ্তর। যদিও এত কিছুর পরেও বাড়িটি ভেঙে ফেলার কাজ এখনও বন্ধ হয়নি। যা নিয়ে অত্যন্ত উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও আশ্রমিকরা।
ঠাকুর পরিবারের যে ক’জন সদস্য শিল্পকর্ম ও সাহিত্য সৃষ্টির কারণে চর্চিত তাঁদের মধ্যে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর অন্যতম। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মেজ ভাই গিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছেলে গুণেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সৌদামিনী দেবীর ছোট পুত্র ছিলেন অবনীন্দ্রনাথ। অর্থাৎ, রবীন্দ্রনাথের ভাইপো। শিল্পকলার পাশাপাশি ছোটদের গল্প লেখার জন্যও তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয়। ক্ষীরের পুতুল, নালক, রাজকাহিনী, শকুন্তলা প্রভৃতি কালজয়ী গল্পের লেখক তিনি। যদিও শান্তিনিকেতনে তিনি অবন ঠাকুর বলেই সমধিক পরিচিত ছিলেন। তাঁর জীবদ্দশাতেই পুত্র অলকেন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে ‘আবাস’ বাড়িটি তৈরি করেছিলেন। গোলাকার এই বাড়িতে বেশ কয়েকবার এসে সময় কাটিয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ। পরে তাঁর নামেই এলাকার নাম হয় অবনপল্লি। অলকেন্দ্রনাথের পুত্র অমিতেন্দ্রনাথ ঠাকুর, যিনি বেশ কিছুদিন বিশ্বভারতীর চীনা ভবনে অধ্যাপনা করেছিলেন তিনিও দীর্ঘদিন ওই বাড়িতে বসবাস করেছেন। বর্তমানে তিনি আমেরিকায় অধ্যাপনা করছেন। অথচ, ঠাকুর পরিবারের সেই ঐতিহ্যবাহী বাড়িটি বর্তমানে প্রোমোটারদের দখলে। ইতিমধ্যেই সেই বাড়ি ভেঙে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্যক্তি মালিকানাধীন ওই জমি বিক্রি হওয়ার পরেই প্রোমোটাররা তা নিজেদের দখলে নিয়ে ভাঙার কাজ শুরু করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রাক্তনী ও আশ্রমিকরা।
ওই এলাকারই বাসিন্দা, বিশ্বভারতীর প্রাক্তন অধ্যাপক সন্দীপ বসু সর্বাধিকারী আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘শান্তিনিকেতন ও বিশ্বভারতীর সংস্পর্শে থাকা ব্যক্তিত্বদের ঐতিহ্যবাহী বাড়িগুলি যেভাবে ভেঙে ফেলা হচ্ছে, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। ইতিহাসের দিক থেকে এই বাড়িগুলির অনেক মূল্য রয়েছে। চোখের সামনে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে দেখে খুবই খারাপ লাগছে।’
তবে আশার কথা, গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন খোদ জেলাশাসক বিধান রায়। তার নির্দেশে তদন্ত শুরু করেছে মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর। সেই প্রেক্ষিতে বুধবার বাড়িটি পরিদর্শন করে মাপজোখ করেছেন বোলপুরের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের আধিকারিক সব্যসাচী ঘটক। হেরিটেজের আওতাভুক্ত হলে প্রোমোটারদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে প্রশাসনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন।