পর্যটক বাড়লেও বেহাল পথ ‘আলপনা’ গ্রামে, সারাইয়ে গরজ নেই প্রশাসনের
বর্তমান | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
সুদীপ পাল, মানকর: আউশগ্রাম-২ ব্লকের লবণধার গ্রাম রাজ্যজুড়ে ‘আলপনা গ্রাম’ হিসাবেই পরিচিত। সারা বছরই বহু মানুষ এখানে ভিড় জমান। এখন বিয়ের মরশুমে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হবু বর-কনেরা প্রি-ওয়েডিং ফটোশ্যুট করতেও আসছেন। কিন্তু গ্রামের অন্যতম প্রধান রাস্তা ঘোষপাড়া থেকে বোলতলা পর্যন্ত এখনও মোরামের। কাঁচা রাস্তায় চলাচল করতে পর্যটকদেরও যথেষ্ট অসুবিধা হচ্ছে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, প্রশাসনকে একাধিকবার জানিয়েও লাভ হয়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ৩০০ বছর আগে বড়ডোবায় জেবনা বা জীবন নামে এক ডাকাত থাকত। বুদবুদে চুরি করতে গিয়ে সে ধরা পড়ে। ডাকাতের উৎপাত থেকে বাঁচতে বড়ডোবার রায়বাড়ির সদস্যরা একটি পাখি ওড়ান। তারা ঠিক করেন, পাখি যেখানে বসবে, সেখানেই নতুন করে বসতি স্থাপন করা হবে। পাখিটি উড়ে এসে লবণধার গ্রামের ধর্মরাজতলায় একটি বড় বটগাছে বসে। সেখানেই নতুন বসতি স্থাপন করা হয়। গ্রামের নাম দেওয়া হয় নতুনগ্রাম। কিন্তু পরে দেখা যায়, আশেপাশে আরও অনেকগুলি নতুনগ্রাম রয়েছে। বিভ্রান্তি এড়াতে তাই নাম পাল্টে রাখা হয় ‘নবধার’ বা ‘নবনধার’। কালক্রমে সেটি ‘লবণধার’ হিসেবে পরিচিত লাভ করে। জঙ্গলঘেরা এই গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়ির দেওয়ালজুড়েই আঁকা বিভিন্ন ছবি। রয়েছে রামায়ণ-মহাভারতের বিভিন্ন কাহিনী থেকে লোকশিল্পের ছবি। কোথাও আবার ছবির মাধ্যমে সচেতনতার পাঠ দেওয়া হচ্ছে। তাই বর্তমানে এই গ্রাম ‘আলপনা গ্রাম’ নামে পরিচিতি লাভ করেছে। ব্যতিক্রমী এই গ্রামে প্রায় সারা বছরই নিয়মিত বহু পর্যটক আসেন। কিন্তু গ্রামের অন্যতম প্রধান রাস্তাটি মোরামের। ফলে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দা থেকে পর্যটকদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, বৃষ্টি হলেই রাস্তায় কাদা হয়। রাস্তার পাশে কোনও ড্রেন নেই। ব্যাপক বৃষ্টি হলে অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকা মেটেপাড়ায় জল জমতে থাকে। ওখানকার মানুষকে সমস্যায় পড়তে হয়। এমনকী, অনেকের বাথরুমের জল এই কাঁচা রাস্তায় এসে পড়ছে। দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। বর্ধমানের বাসিন্দা পর্যটক শুভজিৎ কোনার বলেন, গ্রামের অন্যান্য রাস্তা পাকা থাকলেও, এটিই কাঁচা রয়ে গিয়েছে। বৃষ্টি হলে কাদা হবে। পর্যটকদের সমস্যায় পড়তে হবে।
স্থানীয়রা জানান, গ্রামের বাসিন্দারা এই রাস্তা ব্যবহার করেই ঝিঝিরা থেকে সোলাগড় যাওয়ার পিচ রাস্তায় গিয়ে ওঠেন। তাছাড়া রাস্তার অন্যদিকে ধর্মরাজ ও দুর্গা মন্দির রয়েছে। দেওয়ালচিত্র দেখতে আসা পর্যটকরা মন্দিরেও যান। তাই অবিলম্বে ওই রাস্তা পাকা করা প্রয়োজন। স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, একাধিকবার আবেদন জানিয়েও রাস্তাটির হাল ফেরেনি। দেবশালা পঞ্চায়েতের প্রধান বীথিকা মেটে বলেন, ওই রাস্তার ওয়ার্ক অর্ডার হয়ে গিয়েছে। কাজও শুরু হয়েছে। লবণধার গ্রাম ছাড়া অন্যান্য গ্রামেও কাজ চলছে।