টর্নেডো-ঝড়-শিলাবৃষ্টিতে উত্তর ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকা তছনছ, ভাঙল বাড়ি-গাছ-খুঁটি
বর্তমান | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাসত, সংবাদদাতা, বনগাঁ ও বসিরহাট: উত্তর ২৪ পরগনার একাধিক এলাকা ঝড়, বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি ও টর্নেডোতে কার্যত তছনছ হয়ে গেল বুধবার। কোথাও বাড়ি। কোথাও গাছ। কোথাও নদীবাঁধ ভেঙে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জনজীবন। বুধবার আচমকা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মাথায় হাত এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের।
বুধবার দুপুরে মাত্র তিন মিনিটের মিনি টর্নেডোর দাপটে গাইঘাটার কয়েকটি গ্রাম লন্ডভন্ড হয়ে যায়। প্রায় ৭০ টির মতো বাড়ি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাইঘাটার শশাডাঙায় বিকেল চারটে নাগাদ স্থানীয় একটি বড় আকারের বাওড় থেকে মিনি টনের্ডোটির উৎপত্তি। প্রসঙ্গত টর্নেডো বা ঝঞ্ঝাবর্ত হল স্তম্ভ আকারের ঝড়। যা স্বল্প সময়ে নিমেষে তছনছ করে দেয় যে কোনও এলাকা। গাইঘাটা এমনিতেই টর্নেডো প্রবণ। এবং এ সময় এই ঝঞ্ঝাবর্তের প্রকোপ দেখা যায়। বুধবারের প্রাকৃতিক বিপর্যয় নিয়েও আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস ছিল। এদিন টর্নেডোর দাপটে বহু গাছ ভেঙে উপড়ে পড়ে। বিদ্যুতের স্তম্ভ ভেঙে যায়। বেশি ক্ষতি হয়েছে রঘুনন্দনপুর, তেঁতুলবেড়িয়া এলাকায়। ঘটনাস্থলে যান ব্লক প্রশাসনের কর্তারা। লিপিকা সাহা নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘বাড়িতেই ছিলাম। হঠাৎ ঝড় এল। সব ভেঙে দিল। গাছ ভেঙে পড়ল বাড়ির উপর।’
এর পাশাপাশি এদিন বিকেলে শিলাবৃষ্টি হয় ঠাকুরনগরে। এর ফলে আমের মুকুল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঠাকুরনগর, জামদানি সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় এবং বসিরহাটে হয় শিলাবৃষ্টি। সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া। টাকি, বসিরহাট, হিঙ্গলগঞ্জ এলাকায় প্রবল ঝড়বৃষ্টি হয়। এর ফলে অল্পবিস্তর ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়ে বিস্তীর্ণ এলাকা।
তবে সবথেকে বড় ক্ষতি হয়েছে দুলদুলি গ্রাম পঞ্চায়েতের কেদারচক লঞ্চঘাট এলাকায়। এখানে রায়মঙ্গল নদীর উপর থাকা ৪০০ ফুট বাঁধ ধসে নদীগর্ভে চলে গিয়েছে। ব্লক প্রশাসন দ্রুত বাঁধ মেরামতের আশ্বাস দিয়েছে। বুধবার সকালে এখানে বৃষ্টির সঙ্গে ঝড় শুরু হয়। কয়েকটি জায়গায় গাছ ভাঙে। জল জমে যায়। অনেকের অনুমান, বৃষ্টির জলে নদীবাঁধ নরম হয়ে পড়েছিল। দুপুরে দুলদুলির কেদারচক লঞ্চঘাটের কাছে আচমকা ফাটল দেখা যায়। তারপর বাঁধের দীর্ঘ একটি অংশ ধীরে ধীরে নদীগর্ভে তলিয়ে যেতে থাকে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে প্রায় ৪০০ ফুট বাঁধ নদীর বুকে নেমে যায়। এই ঘটনায় বাসিন্দারা প্রবলভাবে আতঙ্কিত। নৃপেন মণ্ডল ও রাজেশ বিশ্বাস নামে স্থানীয় দুই বাসিন্দা বলেন, ‘সকাল থেকেই বৃষ্টি শুরু। দুপুরে মাটি কাঁপতে থাকে। বাঁধের কাছে গিয়ে দেখি প্রায় ৪০০ ফুট ভেঙে নদীর জলের মধ্যে চলে গিয়েছে। আমরা খুব আতঙ্কে রয়েছি। জল বাড়লেই ভেসে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।’
এর পাশাপাশি অকাল বৃষ্টির ফলে মাথায় হাত আমচাষিদের। এখন গাছে মুকুল এসেছে। ইলিয়াস মণ্ডল, সইদুল গাজি নামে বারাসতের দুই আমচাষি বলেন, ‘ঝড়বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হল। মুকুল ঝড়ে গিয়েছে। চিন্তা বাড়ছে। আবহাওয়ার এমন থাকলে সব্জির পাশাপাশি আমচাষেরও ব্যাপক ক্ষতি হবে।’