গলব্লাডার অপারেশন করিয়ে সংক্রমণ, চুঁচুড়ায় নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে অভিযোগ
বর্তমান | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, চুঁচুড়া: চুঁচুড়ার একটি নার্সিংহোমে গলব্লাডার স্টোন অপারেশন করে বিপাকে পড়েছেন স্বাস্থ্যদপ্তরের চতুর্থ শ্রেণির এক মহিলা কর্মী। ‘ভুল অপারেশন’-এর জেরে ভয়াবহ সংক্রমণ নিয়ে সঙ্গীতা রাউত নামের ওই রোগী বর্তমানে কলকাতার একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন। ইতিমধ্যেই ২২ লক্ষ টাকার চিকিৎসা ব্যয়ের রশিদ দিয়েছে নার্সিংহোম। ঘটিবাটি বিক্রি করে ১১ লক্ষ টাকা চোকালেও বাকি টাকা মেটাতে পারছে না পরিবার। এই অবস্থায় বুধবার সঙ্গীতাদেবীর ছেলে অনিকেত রাউত মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন। পাশাপাশি, ভুল চিকিৎসার জন্য জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্যদপ্তরকে তদন্তের অনুরোধ জানিয়েছে পরিবারটি। একইসঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উদ্ধারের জন্যও আবেদন করে চিঠি দিয়েছেন তাঁরা। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই হইচই পড়েছে।
সম্প্রতি, তৃণমূলের এক পঞ্চায়েত সদস্যার অপারেশনকে ঘিরে জীবন সংশয় তৈরি হয়েছিল। সেক্ষেত্রে চুঁচুড়ার একটি নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ ওঠে। ওই প্রসূতির পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁর দলের সাংসদ ও বিধায়করা। পরে তদন্তে নেমে নার্সিংহোমটি সিল করে দেয় জেলার স্বাস্থ্যদপ্তর। সঙ্গীতাদেবীর ক্ষেত্রেও স্থানীয় একটি নার্সিংহোমের পাশাপাশি শহরের সরকারি হাসপাতালের এক প্রবীণ শল্য চিকিৎসকের যোগ থাকার অভিযোগ উঠেছে। ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, চুঁচুড়া শহরে একাংশের নার্সিংহোমে কার্যত পরিকাঠামো ছাড়াই জটিল অপারেশন করা হয়। স্বাস্থ্যদপ্তরের নজরদারির অভাবের কারণেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। নজরদারি না থাকার কথা অস্বীকার করেছেন হুগলির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ মৃগাঙ্কমৌলি কর। তিনি বলেন, একটি লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। সরকারি পদ্ধতি মেনে যা পদক্ষেপ করার তা করা হবে। অভিযুক্ত চিকিৎসক প্রকাশ সামন্ত বলেন, অপারেশনের বেশ কিছুদিন পর রোগী নতুন করে সমস্যার কথা বলেন। ফলে, অপারেশনের কারণেই যে সমস্যা তৈরি হয়েছে, তা বলা যাবে না। তদন্ত হোক, তাহলে সব পরিষ্কার হবে। আমরা সরকারি হাসপাতালে ওই মহিলার চিকিৎসা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পরিবার তাঁকে অন্যত্র নিয়ে গিয়েছে। সঙ্গীতাদেবীর ছেলে অনিকেত বলেন, গলব্লাডার অপারেশনের পরে মায়ের ক্ষত থেকে মল নির্গত হচ্ছিল। যিনি অপারেশন করেছিলেন, আমরা সেই ডাক্তারের কাছে প্রথমে যাই। তিনি চুঁচুড়ার ইমামবাড়া সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে বলেন। তিনি সেখানকারই ডাক্তার। হাসপাতালের অন্য এক ডাক্তার আমাদের বলেন, অপারেশনের সময় মায়ের মলনালীর একটি অংশ ফুটো হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে মা কলকাতার একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন। সেখানে ২২ লক্ষ টাকা বিল হয়েছে। বিপাকে পড়ে আমরা মুখ্যমন্ত্রী সহ প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছি।
রোগীর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ডিসেম্বরের শেষপর্বে সাহাগঞ্জের বাসিন্দা সঙ্গীতদেবীর অপারেশন হয়েছিল। দিন ১৫ পর দেখা যায়, ক্ষত দিয়ে মল নির্গত হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর পর অনিকেতবাবু গত ২৭ জানুয়ারি মাকে কলকাতার মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যান। কিন্তু পথে অবস্থার অবনতি হওয়ায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে মাকে ভর্তি করাতে বাধ্য হন তিনি। সেখানেই সঙ্গীতাদেবী আইসিসিইউতে চিকিৎসাধীন।