নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: হাসপাতালের সামনে অসুস্থ বৃদ্ধাকে ফেলে পালিয়ে গিয়েছিলেন আত্মীয়রা। পানিহাটি স্টেট জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য মুখ ফিরিয়ে থাকেনি। ভর্তি করে নেয়। চিকিৎসা শুরু করে। ক্রমে সুস্থও করে তোলে ৭০ বছরের সরস্বতী দাসকে। এরপর দু’মাসেরও বেশি সময় হয়ে গিয়েছে। সরস্বতীদেবীকে বাড়ি ফিরিয়ে নিতে কেউ আর আসেনি।
এদিকে বার্ধক্যজনিত স্মৃতিভ্রংশের কারণে ঠিকানা বলতে পারছেন না বৃদ্ধা। ফলে বাড়ি ফেরানো হয়ে পড়ে অসাধ্য। তবে অসাধ্যসাধনও হল। সে কাজ করল হ্যাম রেডিও। ঠিকানা খুঁজে বের করল বৃদ্ধার। জানা গেল, তাঁর নাম সরস্বতী। বাড়ি বনগাঁয়। সঙ্গে জানা গেল, সরস্বতীর আত্মীয়রা তাঁকে বাড়ি নিয়ে যেতে নারাজ।
প্রসঙ্গত গত সপ্তায় এরকমই একটি ঘটনা ঘটেছিল বনগাঁয়। পঁচাশি বছরের নির্মলা হালদার বনগাঁ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তিন মাস আগে তাঁর নাতি রাস্তায় বসিয়ে রেখে-‘দাঁড়াও আমি আসছি’ বলে পালায়। আর আসেননি। হ্যাম রেডিও’র সাহায্যে জানা যায়, নদিয়ার শিমুরালির পালপাড়ায় বাড়ি নির্মলাদেবীর। এরপর পুলিস মৌখিকভাবে কড়া পদক্ষেপ নেয়। এবং গত শনিবার বৃদ্ধার ছেলে অনন্ত হালদার এসে মাকে বাড়ি নিয়ে যান।
তবে সরস্বতীদেবীর ক্ষেত্রে এখনও সেরকম সুখবরের ঘটনা ঘটেনি। জানা গিয়েছে, দু’মাস আগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেরা মানবিক উদ্যোগ নিয়ে অসুস্থ সরস্বতীদেবীকে ভর্তি করে সুস্থ করে তুলেছিল। কিন্তু সুস্থ হয়ে ওঠার পর তাঁর বাড়ির ঠিকানা জানা সম্ভব হচ্ছিল না। এরপর হাসপাতালের ফিমেল ওয়ার্ডের বেডই হয়ে ওঠে তাঁর স্থায়ী ঠিকানা। ছোট সংসারের রূপ নেয় রোগীর শয্যা। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বৃদ্ধার নাম-পরিচয় জানতে হ্যাম রেডিও’র ওয়েস্টবেঙ্গল রেডিও ক্লাবের দারস্থ হয়। হ্যামের নেটওয়ার্কের সৌজন্যে জানা যায়, বৃদ্ধার নাম সরস্বতী দাস। বাপের বাড়ি বনগাঁয়। সেখানে তাঁর এক ভাই থাকেন। স্বামী মারা গিয়েছেন বেশ কয়েক বছর আগে। শ্বশুরবাড়ি বিহারে। বৃদ্ধার এক মেয়েও রয়েছেন। তিনি বিবাহিত। থাকেন উত্তরপ্রদেশে। তিনিও অসুস্থ। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বারাসতে থাকেন এক মামাতো ভাই। এই সব খবর জোগাড় করে হ্যাম। তারপর সরস্বতীদেবীকে বাড়ি ফেরানোর তোড়জোড় শুরু করে। যোগাযোগ করে আত্মীয়দের সঙ্গে। বাড়ি ফিরিয়ে নিতে অনুরোধও জানায়। হ্যাম রেডিও’র আধিকারিকরা বৃদ্ধার বাড়ি গিয়ে বোঝান। কিন্তু কোনও লাভ হয় না। বনগাঁয় থাকা ভাই বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে অস্বীকার করে। তাঁরা জানান, দিদিকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে অপারগ তাঁরা। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আইন মেনে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানায়। হাসপাতালের এক আধিকারিক বলেন, ‘বৃদ্ধার আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলা হবে। তাঁকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে অস্বীকার করলে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ - নিজস্ব চিত্র