এই সময়: যদি বর্ষে মাঘের শেষ ... না মাঘের শেষে এ বছর অন্তত বৃষ্টি হয়নি। তবে ফাল্গুনের প্রথম সপ্তাহেই বছরের প্রথম বৃষ্টির মুখে বাংলার দক্ষিণাংশের জেলাগুলি। গত কয়েক দিন ধরেই ভ্যাপসা গরম বিরক্তি বাড়িয়েছে দক্ষিণবঙ্গে। বেলা একটু বাড়তেই কপালে জমা ঘাম গাল গড়িয়ে নেমেছে। গত কয়েক দিন ধরেই দক্ষিণবঙ্গের বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ক্রমশ বেড়েছে। তার প্রভাবেই জামা ভিজেছে ১৫টি জেলার বাসিন্দাদের।
আলিপুর হাওয়া অফিস থেকে জানানো হয়েছিল, দক্ষিণবঙ্গে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির আবহও তৈরি হচ্ছে। বুধবার আবহবিদরা জানিয়ে দিলেন নেপথ্য কারণও। এ দিন দুপুরে হাওয়া অফিস যে বিশেষ বুলেটিন প্রকাশ করেছে তাতে বলা হয়েছে, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ থেকে তেলঙ্গনা পর্যন্ত একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা বিস্তৃত হয়েছে।
এই অক্ষরেখাটি ভূপৃষ্ঠের মাত্র ৯০০ মিটার উপরে রয়েছে। এর ফলে বঙ্গোপসাগর থেকে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প ঢুকছে দক্ষিণবঙ্গে। ওই অক্ষরেখা ছাড়াও বঙ্গোপসাগরের উত্তর দিকে তৈরি হয়েছে একটি বিপরীত ঘূর্ণাবর্ত বা অ্যান্টি–সাইক্লোনিক সার্কুলেশন।
আবহবিদরা জানাচ্ছেন, উত্তর গোলার্ধে বাতাস সাধারণত ঘড়ির কাঁটার বিপরীতমুখে আবর্তিত হয়। কিন্তু সমুদ্রের উপরে কখনও উচ্চচাপ বলয় তৈরি হলে সেখানে বাতাস ঘড়ির কাঁটার মতো করে ঘুরতে থাকে। বর্তমানে বঙ্গোপসাগরের উপরে এমনই ওয়েদার সিস্টেম তৈরি হয়েছে। এই বিপরীত ঘূর্ণাবর্তও দক্ষিণবঙ্গের বাতাসে জলীয় বাষ্পের অনুপ্রবেশের অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
তার প্রভাবেই ফেব্রুয়ারির ২২–২৩ তারিখ পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষিপ্ত ভাবে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি এবং দমকা হাওয়ার সম্ভাবনা। গত কয়েক মাসের শুকনো আবহাওয়ার ফলে বাতাসের অনেকটা উপরের স্তর পর্যন্ত নানা ধূলিকণায় পূর্ণ। এমন পরিস্থিতিকে বজ্রবিদ্যুতের জন্যে ‘আদর্শ’ বলেই মনে করেন আবহবিদরা।
এই কারণেই সামনের কয়েক দিন দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে বজ্রপাতের সতর্কতাও জারি করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, দুই বর্ধমান ও হুগলিতে বজ্রবিদ্যুৎ–সহ বৃষ্টি ও ঘণ্টায় ৪০–৫০ কিমি বেগে দমকা হাওয়ার কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। কলকাতা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া এবং পূর্ব মেদিনীপুরে ঘণ্টায় ৩০–৪০ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়া এবং বিক্ষিপ্ত ভাবে হালকা ও মাঝারি বৃষ্টির হলুদ সতর্কতা জারি হয়েছে।
ফেব্রুয়ারির ২২ ও ২৩ তারিখেও, শনি ও রবিবার, বিভিন্ন জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা। এর মধ্যে শনিবার দুই বর্ধমান, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর ২৪ পরগনা, হুগলি ও নদিয়ায় বৃষ্টির তীব্রতা বেশি থাকবে বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস। বৃষ্টি হবে দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও। রবিবার দুই মেদিনীপুর এবং দুই ২৪ পরগনায় বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা।