এই সময়, খড়্গপুর: সুবর্ণজয়ন্তীতেও আনন্দের নামগন্ধ নেই! কারণ, পর পর টানা তিন বছর একটি ছাত্রীও ভর্তি হতে আসেনি এই স্কুলে! ফলে ছাত্রীশূন্য স্কুল চালানোয় ‘হ্যাটট্রিক’ করল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাঁতন থানা এলাকার বামনদা গ্রামের বামনদা শ্রী শ্রীমা বালিকা বিদ্যালয়। ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল এই আপার প্রাইমারি স্কুলের।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২১-’২২ শিক্ষাবর্ষে শেষবার ছাত্রী এসেছিল। সে বার ছাত্রীসংখ্যা ছিল মাত্র দু’জন! ২০২৩ সাল থেকে ২০২৫— টানা তিন বছর ছাত্রী নেই এই স্কুলে! বুধবার স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, হাতে মোবাইল নিয়ে কী যেন দেখে চলেছেন স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী শিবানী সর্দার। আর কেউ স্কুলে নেই।
কেন? শিবানী জানান, অন্য স্কুলে মাধ্যমিক পরীক্ষায় গার্ড দেওয়ার দায়িত্ব থাকায় শিক্ষিকারা সেখানে গিয়েছেন।’ তা হলে কী করেন আপনি সারা দিন? শিবানী বললেন, ‘গল্প করে আর মোবাইল দেখে সময় কাটাতে হয়।’
এই স্কুলে দু’জন শিক্ষিকা। বাংলার শিক্ষিকা প্রণালী মণ্ডল। ইংরেজির শিক্ষিকা মধুমিতা জানা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা। ফোনে তিনি বললেন, ‘বছর দশেক ধরে অঙ্ক ও বিজ্ঞানের শিক্ষক নেই। পাশে স্কুল থাকায় সেখানে চলে যাচ্ছে পড়ুয়ারা। তিন বছর ধরে ছাত্রী ভর্তি হয়নি। বসে বসে মাইনে নিতে আমাদেরও খারাপ লাগছে।’
এ নিয়ে স্কুল শিক্ষা দফতরও গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান থেকে অভিভাবকদের নিয়ে বৈঠক করে গত বছর। বৈঠকে গ্রামবাসীরা জানিয়েছিলেন, এ বার তাঁরা মেয়েদের এই স্কুলে ভর্তি করবেন। কিন্তু ভর্তির সময় দেখা গেল, প্রায় দেড়শো মিটার দূরে থাকা মালযমুনা হাই স্কুলে মেয়েদের ভর্তি করেন সকলে।
মধুমিতা বলেন, ‘মালযমুনা হাইস্কুলটি কো-এড। ওরা যদি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রী ভর্তি বন্ধ করে তবেই ছাত্রী মিলবে আমাদের।’ গ্রামের বাসিন্দা বীরেন ঘাঁটি বলেন, ‘যে স্কুলে বেশি শিক্ষক, অনেক ছাত্রছাত্রী সেখানেই তো মেয়েকে ভর্তি করব। এখানে পাশাপাশি তিনটি গ্রামে তিনটি স্কুল। ওরা ছাত্রী পাবে কী ভাবে?’
পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) স্বপন সামন্ত বলেন, ‘ওই স্কুলটিকে অন্য স্কুলের সঙ্গে মেশানোর (মার্জ করার) জন্য পর্ষদকে লিখিত জানিয়েছি। এখনও উত্তর আসেনি। ফের মার্জ করার জন্য বলব।’