এই সময়, আলিপুরদুয়ার ও শিলিগুড়ি: প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভে মন মজেছে পুণ্যার্থীদের। এর ফলে গত প্রায় দু’মাসে ৯০ শতাংশ বুকিং কম হয়েছে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প, জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান ও চিলাপাতা সংলগ্ন এলাকার পর্যটক আবাসগুলিতে। তাতে মাথায় হাত পড়েছে জঙ্গল পর্যটনের সঙ্গে জড়িত কয়েক হাজার মানুষের। মহাকুম্ভে স্নানের হিড়িক থেকে কবে মানুষ বেরিয়ে আসবেন, সে দিকেই তাকিয়ে বসে আছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
অন্যান্য বছর শীতের শুরুতেই পর্যটকদের ঢল নামত পূর্ব ডুয়ার্সের পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে। তাতে পরিস্থিতি এমন হতো যে তিল ধারণের জায়গা থাকতে না স্থানীয় হোটেল, রিসর্ট কিংবা হোমস্টেগুলিতে। অথচ এবার শীতের পর্যটনের মরশুম প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে গেলেও পর্যটকদের দেখা না মেলায় হতাশ ব্যবসায়ীরা।
ইস্টার্ন ডুয়ার্স ট্যুরিজম ডেভোলপমেন্ট অথরিটি সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ‘করোনর আবহে যে ভাবে আমাদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল, এবার মহাকুম্ভের ঠেলায় সেই স্মৃতিই যেন টাটকা হয়ে উঠছে। বললে হয়তো অনেকেই বিশ্বাস করবেন না যে, গতবারের শীতনির্ভর পর্যটন মরশুমের তুলনায় এবার ৯০ শতাংশের উপর কম বুকিং হয়েছে। এই লোকসান সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। এ বছর আর আশার আলো দেখতে পাচ্ছি না।’
রিসর্ট অথবা হোমস্টে তৈরি করতে গিয়ে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য কমবেশি সবাইকেই ব্যাঙ্ক কিংবা অর্থলগ্নি সংস্থা থেকে ঋণ নিতে হয়েছে। কিস্তিতে টাকা শোধ করতে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে পর্যটন ব্যবসায়ীদের।
আলিপুরদুয়ার জেলা হোটেল অ্যান্ড রিসর্ট ওনারর্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কিঙ্কর রায় বলেন, ‘হলং বনবাংলো পুড়ে যাওয়া বক্সা-জয়ন্তীর অচলাবস্থার কারণে এমনিতেই পর্যটক মহলে ডুয়ার্স নিয়ে সংশয় জন্ম নিয়েছে। তার মধ্যে ১৪৪ বছর পর পর আসা মহাকুম্ভ স্নানের পর্ব আমাদের বিরাট ক্ষতির মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। করোনার ধাক্কাই এখনও পুরোপুরি আমরা কাটিয়ে উঠতে পারিনি। এক লপ্তে প্রায় ৯৫ শতাংশ পর্যটক কমে যাওয়ায় চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছি আমরা।
মহাকুম্ভকে টেক্কা দিতে পেরেছে একমাত্র তুষারপাত। কিছু পর্যটক বাংলার সীমানা পেরিয়ে সিকিমে ঘাঁটি গেড়েছেন বরফে স্নান করতে। পশ্চিমী ঝঞ্ঝার জেরে সিকিমে মঙ্গলবার থেকে ফের তুষারপাত শুরু হয়েছে। বরফে ঢাকা পড়েছে নাথুলা, ছাঙ্গু, লাচুং ও লাচেন। স্নো–ফল দেখতে ভালোবাসেন এমন কিছু পর্যটক উত্তর সিকিমের লাচুং ও লাচেনে বসে রয়েছেন।
সিকিমের রাজধানী গ্যাংটকেও ভিড় জমিয়েছেন কয়েক হাজার পর্যটক। এঁদের লক্ষ্য ছাঙ্গু ও ভারত-চিন সীমান্তের নাথুলা। শনিবার পর্যন্ত সিকিমে বৃষ্টি এবং তুষারপাত চলবে বলে আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস। দার্জিলিং এবং কালিম্পংয়েও বৃষ্টি এবং তুষারপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। তবে সিকিমের চেয়ে দার্জিলিংয়ে পর্যটকদের ভিড় কম।
প্রতি বছর ছবি এমনটাই থাকে বলে মত হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্ক–এর সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যালের। বলেন, ‘মহাকুম্ভের জেরে উত্তরবঙ্গের পর্যটনে কোনও প্রভাব পড়েনি। মরশুমের এই সময়টা উত্তরবঙ্গের পর্যটনে ড্রাই সিজ়ন। সামান্য কিছু পর্যটক প্রতিবারই আসেন স্নো–ফল দেখতে। তাঁরাই আসছেন।’