অশীন বিশ্বাস, ব্যারাকপুর
ব্যারাকপুর কমিশনারেট এলাকায় ২০২৪ সালে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে এমনিতেই উদ্বেগে ছিল পুলিশ। চলতি বছরের শুরু থেকে সেই চিত্রের খুব একটা বদল হয়নি। যার সর্বশেষ সংযোজন বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে গত দু’দিনে পরপর দু’টি দুর্ঘটনায় চার জনের মৃত্যু।
যদিও রবিবার একই পরিবারের যে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে সেটি অবশ্য বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের অধীন। কিন্তু পরপর দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পুলিশ। মৃত্যুর হার কমাতে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের পাশাপাশি কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে, বিটি রোড, ঘোষপাড়া রোড–সহ গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় পুলিশ অফিসারের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বাড়ানো হচ্ছে মহিলা পুলিশ ফোর্সও।
দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা কমানো ব্যারাকপুর পুলিশের কাছে এখন রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সূত্রের খবর, ট্র্যাফিক পয়েন্টগুলিতে যেখানে যেখানে এখনও সাব ট্র্যাফিক গার্ড রয়েছে, তা তুলে দিয়ে পরিবর্তে সেখানে ট্র্যাফিক গার্ড করা কমিশনারেটের পরিকল্পনায় রয়েছে। সেখানে দায়িত্ব সামলাবেন অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ইনস্পেক্টর পদমর্যাদার অফিসাররা।
পুলিশ কমিশনার অজয় ঠাকুর নিজে সেইমতো আলাপ আলোচনা চালাচ্ছেন এবং অতি শীঘ্রই তা বাস্তবায়িত হবে বলে খবর। কমিশনারেটের এক পুলিশ কর্তার কথায়, ‘কমপক্ষে আরও ১৫-২০ জন অফিসার বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। সাধারণ পুলিশ কর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে মহিলা পুলিশ কর্মীর সংখ্যাও বাড়ানো হচ্ছে। যার মূল উদ্দেশ্য নজরদারি আরও বাড়িয়ে মানুষের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা।’
শুধু তাই নয়, সমস্ত সিগন্যালিং পয়েন্টগুলিকে আরও বেশি সক্রিয় করা, রাস্তার যে সব পয়েন্টগুলিতে আলো নেই সেখানে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা, রাস্তার যে অংশ বেহাল হয়ে রয়েছে তার সংস্কার করার উপরও জোর দিয়েছে পুলিশ। বিশেষ ভাবে নজর দেওয়া হয়েছে রাস্তার পাশের পানশালাগুলিতে। সেগুলি সঠিক সময়ে বন্ধ হচ্ছে কিনা তার উপর নজরদারি ইতিমধ্যে পুলিশ শুরু করে দিয়েছে। পুলিশ মনে করছে পানশালাগুলি থেকে মদ্যপ অবস্থায় বেরনোর পর গত কয়েক দিনে যে ভাবে কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে তা মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ানোর অন্যতম কারণ। সে কারণেই পানশালাগুলির উপর বিশেষ নজরদারি পুলিশ শুরু করেছে।
ব্যারাকপুর কমিশনারেটের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে কমিশনারেট এলাকায় ৪৫টি খুন ও অপরাধমূলক হত্যার ঘটনা ঘটলেও পথ দুর্ঘটনায় ১৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। সংখ্যাটা প্রায় চার গুণ বেশি। ৩৫০ জনের মতো জখম হয়েছেন। যাদের মধ্যে অনেকেরই বিকলাঙ্গ হয়ে দিন কাটছে। ২০২৫ সালে এসেও সংখ্যাটা বেড়ে চলেছে। পুলিশ মনে করছে, দুর্ঘটনায় লাফিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার ক্ষেত্রে মানুষের সচেতনতাও অনেকাংশে দায়ী। ব্যারাকপুরের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (সদর ও ট্র্যাফিক) অতুল বিশ্বনাথন বলেন, ‘দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা কমাতে নতুন করে কিছু চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। তবে মানুষকেও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। তাহলেই মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব।’