এই সময়: শালকু সোরেন এবং পার্থ বিশ্বাস। এক দশকেরও বেশি সময় আগে মাওবাদীদের হাতে নিহত হয়েছিলেন দু’জন। এ বার তাঁদের নাম উল্লেখ করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসএফআই–কে ‘সায়েস্তা’ করার হুঁশিয়ারি দেওয়া হলো দেওয়াল লিখনে।
এসএফআইয়ের অভিযোগ, খতমের লাইন দেখিয়ে আরও একবার তাঁদের ভয় দেখানোর চেষ্টা চলছে। এসএফআই–এর বিরুদ্ধেও পাল্টা অভিযোগ, তাঁরা ‘লাশ ফেলে দেওয়া’র হুমকি দিয়েছে। গত দু’দিন ধরে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে।
২০০৯–১০ সালে পশ্চিম মেদিনীপুর এবং পুরুলিয়াতে শালকু এবং পার্থকে ‘খতম’ করে মাওবাদীরা। শালকুর দেহ লালগড়ের ধরমপুরে সিপিআইএমের পার্টি অফিসের সামনে দিন তিনেক পড়েছিল। পচা গন্ধ বেরতে শুরু করলেও কেউ এগিয়ে এসে তাঁর সৎকার করেননি। এলাকায় ত্রাসের স্থিতি বজায় রাখতে মাওবাদীরা এই ঘটনা ঘটিয়েছিল বলে অভিযোগ করে সিপিএম। শালকু ছিলেন ধরমপুর এলাকার সিপিএমের সক্রিয় কর্মী।
২০১০ সালে পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড় থেকে পার্থ এবং সৌম্যজিৎ বসু নামে এক এনজিও কর্মীকে অপহরণ করে মাওবাদীরা। দীর্ঘদিন বাদে তাঁদের দেহ উদ্ধার হয় বরাভূমের জঙ্গল থেকে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের একটি দেওয়াল লিখনে বলা হয়েছে, ‘এসএফআই–এর সঙ্গে শালকু ট্রিটমেন্ট’ হবে। আর পার্থ বিশ্বাসের পরিণতি মনে করিয়ে অন্য একটি দেওয়াল লিখনে এসএফআইকে সতর্ক করা হয়েছে। যা নিয়ে তীব্র বিতর্ক দানা বেঁধেছে।
এসএফআই নেতা শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হেনস্থার ঘটনা নিয়ে কাজ করা আইসিসি–তে আমরা অবিলম্বে নির্বাচন চাইছি। আর বিরোধীরা চাইছেন এখন নির্বাচন না করে গোটা আইসিসির পুনর্গঠন। এই ঘটনা নিয়ে মতবিরোধ হতেই লাঠি হাতে ক্যাম্পাসে আমাদের হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি দেওয়াল লিখন করা হয়।’
এসএফআই–এর বিরুদ্ধে ছাত্রী অনুষ্ণা দাসের পাল্টা অভিযোগ, ‘এসএফআই আমাদের গেটে তালা লাগিয়ে আটকে দিতে চেয়েছিল। লাশ ফেলে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছিল। আমরা দেখিনি কারা এই দেওয়াল লিখেছে। কিন্তু আমরা কেউ এটা লিখিনি।’
তাহলে কে লিখল? পার্থ বিশ্বাসের নামে যে দেওয়াল লিখন হয়েছে তার দায়ভার স্বীকার করেছে আরএসএফ বলে একটি ছাত্র সংগঠন। কিন্তু শালকুর নামে তাঁরা কোনও দেওয়াল লেখেনি বলে দাবি তাদের। সংগঠনের নেতা ইন্দ্রানুজ রায় বলেন, ‘আমরা শালকুর সঙ্গে যে পরিণতি হয়েছিল, তার বিরুদ্ধে। কারণ মৃত্যুর পরে মৃতদেহের সৎকার মানবাধিকার। সেটা লঙ্ঘন হোক এমনটা আমরাও চাই না। কিন্তু পার্থ বিশ্বাসের কথা মনে করিয়ে এসএফআইকে আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চেয়েছিলাম দখলদারির রাজনীতির পরিণতি কী হয়!’
যাদবপুরের এই দেওয়াল লিখনের ইমপ্যাক্ট গিয়ে পড়েছে বৃহত্তর রাজনীতির উপরেও। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী তথা সিপিএম নেতা সৃজন ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘শালকু আর পার্থর মতো সারা পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল এবং মাওবাদীদের হাতে খুন হওয়া আমাদের শহিদের সংখ্যা গুনে শেষ করা যাবে না। এত সদস্যই নেই ওই ছাত্র সংগঠনগুলির। তবে যাঁরা ক্যাম্পাসে কুকুর চিৎকার করলে দৌড়ে পালায়, তাঁদের এই সব ফাঁকা আওয়াজে কিছু হবে না।’ যাদবপুরের আর এক প্রাক্তনী তথা তৃণমূূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তন্ময় ঘোষের বক্তব্য, ‘সিপিএম লাশ, প্রাণনাশের হুমকি নিয়ে যত কম কথা বলবে তত ভালো। তবে ওদের দ্বিচারিতাকে মানুষের সামনে তুলে ধরতে কোনও রকম হিংসাকে আমরা সমর্থন করি না।’ উপাচার্য ভাস্কর গুপ্ত জানিয়েছেন, অভিযোগ এলে খতিয়ে দেখা হবে।