একুশে আসে প্রতি বার। তবে এ বারের একুশে আলাদা। ভাষা-আন্দোলনের পীঠভূমি বাংলাদেশ এখন ক্ষত-বিক্ষত। মৌলবাদের থাবা সেখানে জাঁকিয়ে বসেছে। আর তার বিপরীতে এ-পারের বাংলায় আরএসএস-বিজেপি শিবির পাল্টা সংখ্যালঘু-বিরোধিতার হাওয়া তুলে মেরুকরণের আবহ তীব্র করতে চাইছে। এ বারের এই ভিন্ন একুশে রবীন্দ্রনাথকে সহায় করে মাঠে নামছে সিপিএম। এক দিকে মুক্তচিন্তার বার্তা দিয়ে সাম্প্রদায়িকতার বিরোধিতা করা এবং তার পাশাপাশি মতাদর্শে শাণ দেওয়া তাদের লক্ষ্য।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস যে দিন, সেই ২১ ফেব্রুয়ারি একই সঙ্গে পালিত হয় ‘রেড বুক ডে’ হিসেবেও। সমাজতান্ত্রিক মহলে সেই দিনের কদর আলাদা। ওই দুই দিবসে একগুচ্ছ কর্মসূচির মাধ্যমে মুক্তচিন্তা এবং মতাদর্শের কথা বলতে চায় সিপিএম। সেই সঙ্গে এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বক্তব্যের প্রাসঙ্গিকতার কথাও বিশেষ ভাবে তুলে ধরতে চাইছে তারা।
ওই দিন কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়া চত্বরে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে সিপিএম। দলীয় সূত্রের মতে, এক দিকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি এবং তাকে কেন্দ্র করে এ-পারে ‘ধর্মকে কেন্দ্র করে রাজনীতি’র যে আবহ, তাকে প্রতিহত করতে ভাষা দিবসের গুরুত্ব তুলে ধরা বিশেষ জরুরি। থাকছে ‘সাংস্কৃতিক সম্পর্ক’ বিষয়ে আলোচনাও। সেখানে যোগ দেওয়ার কথা রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য পবিত্র সরকারের। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, সিপিএমের এই কর্মসূচিতে রবীন্দ্রনাথের চিন-যাত্রার একশো বছরকেও স্মরণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ১৯২৪-এ চিনে গিয়ে ৪৯ দিন ধরে বিভিন্ন জায়গায় বক্তৃতা ও ভ্রমণ করেছিলেন। ওই বছর ১২ এপ্রিল থেকে ৩০মে পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথের বক্তৃতাগুলি ‘টক্স ইন চায়না’ নামে সঙ্কলিত হয়েছিল। পরে সেগুলি প্রবন্ধ সঙ্কলন হিসেবেও প্রকাশ পায়। সিপিএমের কর্মসূচিতে রবীন্দ্রনাথের চিন-পর্ব সংক্রান্ত কিছু বক্তব্যের অংশবিশেষ সমবেত ভাবে পাঠ করা হবে। কলেজ স্ট্রিটে ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে থাকার কথা সিপিএম নেতা বিমান বসু, সুজন চক্রবর্তী, অনাদি সাহুদের পাশাপাশি দলের ছাত্র-যুব নেতৃত্বেরও।
১৮৪৮-এর ২১ ফেব্রুয়ারি কার্ল মার্ক্স ও ফ্রেডরিক এঙ্গেলসের লেখা ‘কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো’ প্রকাশিত হয়েছিল। সেই উপলক্ষে ভারত-সহ বিশ্বের নানা দেশেই বামপন্থীরা ইস্তাহার পাঠ-সহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে ‘রেড বুক ডে’ পালন করেন। বইপাড়ার কর্মসূচিতে সেই উদ্যাপনও থাকবে। পরের দিন, ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে হুগলির ডানকুনিতে শুরু হচ্ছে সিপিএমের ২৭তম রাজ্য সম্মেলন। রাজ্যে সব দলীয় দফতরে দলের পতাকা তোলার কর্মসূচি থাকে রাজ্য সম্মেলন সূচনার দিন। ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় স্তরে বামপন্থী বইয়ের পাঠ ও বিক্রির কর্মসূচিও সঙ্গে জোড়া হচ্ছে। ন্যাশনাল বুক এজেন্সিও (এনবিএ) এই পরিকল্পনায় সহায়ক।
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজনের কথায়, “সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও মৌলবাদের জিগির দু’পারের বাংলাতেই মাথাচাড়া দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মুক্তচিন্তা জরুরি। তার জন্য দরকার শিক্ষা, মতাদর্শ ও ইতিহাস স্মরণ। সেই পথেই আমরা যেতে চাইছি।” রাজ্য সরকারের তরফে এ বারও ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে থাকার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।