• বিষাক্ত পায়েসে কাজ না হওয়াতেই কি হাতের শিরা কাটার সিদ্ধান্ত? ট্যাংরার ঘটনায় উত্তর খুঁজছে পুলিশ
    আনন্দবাজার | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • পরতে পরতে রহস্য ট্যাংরাকাণ্ডে। ট্যাংরায় বিত্তবান দে পরিবারের সব সদস্য আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন, না কি পরিকল্পনা করে বাড়ির তিন জনকে খুন করা হয়েছে, সেই রহস্য এখনও উন্মোচিত হয়নি। তবে একটি বিষয়ে পুলিশ নিশ্চিত যে, যা-ই ঘটে থাকুক না কেন, তা খুব পরিকল্পনা করে করা হয়েছে। সেই পরিকল্পনা কবে থেকে করা হয়েছে, কে বা কারা এই পরিকল্পনার নেপথ্যে ছিলেন, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

    রহস্য ঘনীভূত হয়েছে বিষাক্ত পায়েসকে ঘিরে। পুলিশ সূত্রে খবর, সোমবার বাড়ির সদস্যেরা ঘুমের কড়া মাত্রার ওষুধ পায়েসের সঙ্গে মিশিয়ে খেয়েছিলেন। সবাই সেই পায়েস খেয়েছিলেন কি না, খেলে স্বেচ্ছায় খেয়েছিলেন না কি কেউ তাঁদের খেতে বাধ্য করেছিলেন— এই প্রশ্নগুলির উত্তর খুঁজছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, ট্যাংরার বাড়িতে মৃত কিশোরীর মুখ থেকে গ্যাঁজলা বেরোচ্ছিল। ঠোঁট এবং নাকের নীচে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। অপর দুই মহিলার হাতের শিরা কাটা ছিল। তবে তাঁদের গলাতেও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। বিষাক্ত পায়েসে কাজ না-হওয়াতেই হাতের শিরা কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা কি না, তা ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের।

    হাতের শিরা কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা হয়ে থাকলে মৃত কিশোরীর ঠোঁট এবং নাকের নীচে এবং দুই মহিলার গলায় আঘাতের চিহ্ন কী ভাবে এল, সেই প্রশ্নেরও উত্তর মেলেনি।

    আপাতত ঘটনার পুনর্নির্মাণ করে রহস্যের কিনারা করতে চাইছে লালবাজার। বুধবারই কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা জানিয়েছিলেন, ট্যাংরার ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হবে। যে হেতু পরিবারের দুই সদস্যই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তাই সেই প্রক্রিয়ায় দেরি হচ্ছে।

    প্রসঙ্গত, বুধবার সকালে ট্যাংরার অতুল শূর রোড এলাকায় দে পরিবারের চারতলা বাড়ি থেকে দুই মহিলা এবং এক কিশোরীর নিথর দেহ। তাঁদের নাম রোমি দে, সুদেষ্ণা দে এবং প্রিয়ম্বদা দে। কিছু সময় পরে জানা যায়, ইএম বাইপাসে অভিষিক্তা মোড়ের কাছে পথ দুর্ঘটনার কবলে পড়েছেন দে পরিবারের আরও তিন সদস্য। আহত হন রোমির স্বামী প্রসূন দে, সুদেষ্ণার স্বামী প্রণয় দে এবং পরিবারের এক নাবালক সদস্য। পরিবারের সকলেই নাকি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন।

    দুর্ঘটনার পরে আহতেরা দাবি করেন, আর্থিক সমস্যার কারণেই একসঙ্গে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তাঁরা! তাঁদের দাবি মোতাবেক, ছ’জন একসঙ্গে পায়েসের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খেয়েছিলেন। পরে গাড়ি নিয়ে তিন জন বেরিয়ে পড়েন এবং আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে পিলারে ধাক্কা মারেন। স্থানীয়েরা জানান, এক দিন আগে থেকেই ওই বাড়ির কাউকে ডাকাডাকি করে সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। ফলে তিন জনের মৃত্যু কখন হয়েছে, তা জানতে ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছেন তদন্তকারীরা।

    দে পরিবারের চামড়ার ব্যবসা রয়েছে। কারখানাও রয়েছে তাদের। সেই কারখানাতেও বৈভব এবং রুচিশীলতার ছাপ স্পষ্ট। আশপাশের লোকেরা বলছেন, মঙ্গলবারও খোলা ছিল কারখানা। বুধবার অবশ্য সেটি বন্ধ পড়ে ছিল সকাল থেকে। বাইরে থেকে দেখে বোঝা যায়, চারতলা বাড়ির মতো কারখানাটিও পরিপাটি করে গোছানো। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হয় কারখানাটি। এমন বৈভবশালী পরিবারে আর্থিক সমস্যার কারণে আত্মহত্যার তত্ত্ব কতটা গ্রহণযোগ্য, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে অনেকের মনেই।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)