• ১৬টি স্থায়ী পদে পাঁচ জন, জল পরীক্ষা করবেন কারা?
    আনন্দবাজার | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • প্রতি গ্রীষ্মেই পানীয় জলের চাহিদা বাড়ে কলকাতায়। সংযুক্ত এলাকায় এখনও জল কিনে খেতে হয় অনেককে। এই পরিস্থিতিতে গোদের উপরে বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়ায় পানীয় জল থেকে সংক্রমণের সমস্যা। সম্প্রতি কলকাতা পুরসভার ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডে একটি বড় আবাসনের জলাধারে মিলেছে ই-কোলাই ব্যাক্টিরিয়া। সেখানে গত দু’মাসে একাধিক আবাসিক ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। ওই আবাসনে পুরসভা জল সরবরাহ না করলেও পানীয় জলে এমন সংক্রমণ চিন্তা বাড়িয়েছে পুরসভার স্বাস্থ্য ও জল সরবরাহ বিভাগের আধিকারিকদের।

    শহরের ১৪৪টি ওয়ার্ডে নিয়মিত পানীয় জলের নমুনা পরীক্ষা করার কথা পুরসভার খাদ্য সুরক্ষা বিভাগের। এই কাজে জল সরবরাহ এবং স্বাস্থ্য বিভাগও সাহায্য করে। সূত্রের খবর, শহরের রাস্তায় প্রায় ২০ হাজার জলের কল রয়েছে। ওই সমস্ত কলের জল ছাড়াও পলতা ও গার্ডেনরিচ জল প্রকল্প এবং বিভিন্ন বুস্টার পাম্পিং স্টেশন থেকে জলের নমুনা নিয়ে পুরসভার খাদ্য গবেষণাগারে নিয়মিত পরীক্ষা করা হয়। তবে, এত রকম নমুনা পরীক্ষার জন্য ১৬টি স্থায়ী ওয়াটার অ্যানালিস্ট পদে বর্তমানে রয়েছেন মাত্র পাঁচ জন। বাকি চার জন অস্থায়ী। তাই কাজ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। পুর স্বাস্থ্য বিভাগের এক আধিকারিক বললেন, ‘‘গরম পড়লেই পুরসভার জলে সংক্রমণের অভিযোগ আসতে শুরু করে। গত মাসেই ১০৭ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বস্তিতে পানীয় জল থেকে সংক্রমণের অভিযোগ উঠেছিল। আমরা গিয়ে জলের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করাই। কোথায় সমস্যা ছিল, খুঁজে বার করি।’’

    খাবারে ভেজাল পরীক্ষা করে পুর খাদ্য সুরক্ষা বিভাগ। পুরসভার সদর দফতরে রয়েছে খাদ্য গবেষণাগার। পানীয় জলের পরীক্ষাও সেখানেই হয়। স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিকদের মতে, এত বড় শহরে মাত্র ন’জন ওয়াটার অ্যানালিস্টকে দিয়ে কাজ চালানো কঠিন। এক আধিকারিক বললেন, ‘‘অবস্থা এমনই যে, ছুটির দিনেও ওয়াটার অ্যানালিস্টদের অফিসে ছুটে আসতে হয়।’’

    ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডে বাইপাস লাগোয়া যে আবাসনের জলে ই-কোলাই ব্যাক্টিরিয়া মিলেছে, সেখানকার আবাসিক সংগঠনের সহ-সভাপতি বিবেক বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘আমাদের আবাসনে আগুন নেভানোর জলাধারের পাশেই সাধারণ জলাধার। আগুন নেভানোর জলাধারটি গত দশ বছরে পরিষ্কার হয়নি। ওই জলাধার ভরে গেলে সেই দূষিত জল পাশের জলাধারে গিয়ে পড়ে। আমাদের সন্দেহ, সেখান থেকেই বিপত্তি ঘটেছে।’’ বুধবার পুর স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা বাইপাসের ওই আবাসনে গিয়ে দু’টি জলাধার থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন। লাগোয়া আর একটি আবাসন থেকেও জলের নমুনা নেওয়া হয়। দক্ষিণ কলকাতার আর একটি বহুতল থেকেও নমুনা সংগ্রহ করেন পুরকর্মীরা।

    এমনিতে শহরের যে কোনও আবাসনে জল পরীক্ষা করানোর দায়িত্ব আবাসন কর্তৃপক্ষের। নির্মাণের নকশা অনুমোদনের সময়ে পুরসভাকে এই মর্মে জানাতে হয় আবাসন কর্তৃপক্ষকে। তবে, পুরসভাকে দিয়ে আবাসনের ভিতরের জল পরীক্ষা করাতে হলে আবেদন জানিয়ে ১৮০০ টাকা ফি দিতে হয়। আবাসন কর্তৃপক্ষ মনে করলে পুরসভা স্বীকৃত অন্য পরীক্ষাগার থেকেও জলের নমুনা পরীক্ষা করাতে পারেন।

    বাইপাসে ওই আবাসনের পাশের আর একটি আবাসনের তরফে সৌমিত্র চন্দ্র বলেন, ‘‘আমরা বছরে চার বার জলের নমুনা পরীক্ষা করাই। আমাদের জলে সমস্যা নেই।’’ গড়িয়াহাটের এক আবাসনের আবাসিক, চিকিৎসক রঙ্গন কোলে বলেন, ‘‘আমাদের আবাসনে তিন-চার মাস অন্তর জল পরীক্ষা করানো হয়।’’ উত্তর কলকাতার মানিকতলার একটি আবাসনের সম্পাদক উৎপল মিত্র জানান, তাঁরা এখনও জল পরীক্ষা করাননি। তবে, এ বার করাবেন।

    এত কম সংখ্যক ওয়াটার অ্যানালিস্ট দিয়ে নিয়মিত জলের নমুনা পরীক্ষা করানো কি সম্ভব? পুরসভার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুব্রত রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘যাঁরা আছেন, আপাতত তাঁদের দিয়েই চালাতে হবে।’’

  • Link to this news (আনন্দবাজার)