• জলবায়ু-উদ্বাস্তুর ভিড়ে হারাচ্ছে শিশু অধিকার
    আনন্দবাজার | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • সুন্দরবন এলাকার সরকারি স্কুল। প্রধান শিক্ষক খেয়াল করলেন, ঘূর্ণিঝড়ের পর এক পড়ুয়া স্কুলে আসছে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, দুর্যোগে তার বাড়ি ধুয়েমুছে গিয়েছে। ভেসে গিয়েছে বইখাতা, মার্কশিট, জরুরি নথিও। পরে প্রধান শিক্ষক ওই ছাত্রকে স্কুলে ফেরাতে তার হস্টেলে থাকার ব্যবস্থা করেন।

    শিশু-অধিকারের উপরে পরিবর্তিত জলবায়ু কী ভাবে প্রভাব বিস্তার করে চলছে, সে সংক্রান্ত আলোচনায় এমনই নানা ঘটনার কথা উঠে এল। বুধবার, কলকাতা প্রেস ক্লাব, ‘প্রাজাক’ ও ‘তেরে দে হোমস’-এর সহযোগিতায় পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার সুরক্ষা আয়োগের উদ্যোগে ‘সংবাদমাধ্যম, জলবায়ু পরিবর্তন এবং সুন্দরবনের শিশু অধিকার’ শীর্ষক এক বিশেষ কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল। ছিলেন আয়োগের চেয়ারপার্সন তুলিকা দাস, উপদেষ্টা অনন্যা চক্রবর্তী, প্রেস ক্লাবের প্রেসিডেন্ট স্নেহাশিস শূর, তেরে দে হোমস-এর অধিকর্তা অনিন্দিত রায়চৌধুরী-সহ অনেকে।

    বিভিন্ন বক্তাদের কথায় এ দিন উঠে আসে, জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে ঝড়, বন্যা বা খরার প্রভাবে বেশি অবহেলিত হয় শিশুরাই। অভিভাবকেরা বাড়িঘর ছেড়ে গেলে বন্ধ হয় পড়ুয়ার স্কুলে যাওয়া। বাধাপ্রাপ্ত হয় স্বাভাবিক বিকাশ। চেনা গণ্ডি, বন্ধু, বাড়িঘর বার বার বদলানোর প্রভাবে ভয়, আতঙ্ক গ্রাস করে তাদের। সুন্দরবনেও আমফান, আয়লা পরবর্তী সময়ে বেড়েছে শিশুপাচার, স্কুলছুটের সংখ্যা। এমনকি, অর্থনৈতিক ভাবে অসহায় মা-বাবা সন্তানকে ফেলে চলে গিয়েছেন বা বিক্রি করে দিয়েছেন, সেই নজিরও রয়েছে। ত্রাণে খাবার, ত্রিপল, জল, ওষুধ পেলেও মেলে না বইখাতা। আবার সুন্দরবনে গরমের প্রকোপ বাড়ায় ওই এলাকার শিশুদের গরমকালে স্কুলে আসা কমছে। চাষজমিতে নোনাজল ঢোকায় কৃষিতে তার প্রভাব পড়ছে। অভাবে বহু পরিবারের সন্তান শিশুশ্রমিকে পরিণত হচ্ছে। মেয়েদের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে আঠারোর অনেক আগেই।

    আলোচনায় উঠে এল ম্যানগ্রোভ অরণ্য ধ্বংস হওয়ায় কলকাতার বিপদ বাড়ার কথাও। সুন্দরবনের শরণার্থী সমস্যা কমাতে অবিলম্বে সরকারি স্তরে নীতি নির্ধারণ করা জরুরি। পাশাপাশি, মানুষকে সচেতন করতে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকার প্রসঙ্গ উঠে আসে এ দিন।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)