কৌশিক দে, মালদা
মাশরুম চাষে দিশা দেখাচ্ছে মালদা। বেশ কয়েকজন যুবক মাশরুম চাষ করে ইতিমধ্যে স্বনির্ভর হয়েছেন। গত ২১ জানুয়ারি মালদায় একটি সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানে এসে মালদার মাশরুম চাষের প্রশংসা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তিনি বলেছিলেন, মালদায় উৎপাদিত মাশরুম দেশ-বিদেশের রপ্তানি করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরে ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসন মালদার মাশরুম চাষিদের একটি তালিকা তৈরি করে নানা ভাবে সহযোগিতা করার পরিকল্পনা নিয়েছে।
জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া বলেন, ‘মাশরুমের চাষ বাড়াতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের কর্মশালা ও আগ্রহীদের সহযোগিতা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মালদা জেলার ইংরেজবাজার, পুরাতন মালদা, গাজোল ব্লকে বেশ কিছু বেকার যুবকেরাও মাশরুম চাষ করে স্বনির্ভর হয়েছেন। পাশাপাশি অন্যদেরও কর্মসংস্থান তৈরির দিশা দেখাচ্ছেন তাঁরা। মাশরুম উৎপাদনের জন্য কোনও জমির প্রয়োজন হয় না। বাড়ির ছাদ অথবা ফাঁকা উঠানেও ছাদযুক্ত ঘর করে মাশরুম উৎপাদন করা যায়। বিদেশের বাজারে এর চাহিদা রয়েছে। ইদানীং জেলার বিভিন্ন রেস্তোরাঁ, হোটেলে মাশরুমের ব্যবহার বেড়েছে। সেই কারণে মাশরুম উৎপাদনের মাধ্যমে কী ভাবে কর্মসংস্থান গড়ে তোলা সম্ভব, রূপরেখা তৈরি করছে রাজ্য সরকার।
পুরাতন মালদা ব্লকের সাহাপুর গ্রামের মাশরুম উৎপাদক সোনাই হালদার বলেন, ‘কলেজের পাট চুকিয়ে একটা সময়ে বেকার হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। এরপরই মাশরুমের বিষয়টি নানা ভাবে জানতে পারি। প্রথমে মাশরুম চাষে কিছুটা সমস্যা হলেও পরে সেটির উৎপাদন পাকাপাকিভাবে শিখে ফেলি। চার বছর ধরে এই চাষ করে ভালো লাভ হচ্ছে। বছরে দু'তিন বার মাশরুম বিক্রি করে ভালো রোজগার হচ্ছে। খরচের তুলনায় লাভ অনেকটাই বেশি।’
তাঁর সংযোজন, ‘হোটেল, রেস্তোরাঁ থেকে বিভিন্ন খাবারে মাশরুমের ব্যবহার বেড়েছে। তাই চাহিদাও বেড়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মাশরুম চাষের নানাভাবে সহযোগিতার কথা বলেছেন। ফলে আগামীতে মাশরুম চাষের ক্ষেত্রে অনেকেই আগ্রহ দেখাচ্ছে।’
মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি উজ্জ্বল সাহা বলেন, ‘বিভিন্ন রপ্তানি কারকদের মাধ্যমে মালদার মাশরুম যাতে বিদেশের বাজারে পাঠানো যায় সে ব্যাপারে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। গত ১০ বছরে মালদায় মাশরুম চাষের এলাকা বেড়েছে। আগামীতে এই জেলায় উৎপাদিত মাশরুম বিদেশে রপ্তানি হলে বেকার যুবকদের আগ্রহ বাড়বে।’
মালদা জেলা উদ্যানপালন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, মাশরুম চাষের জন্য ছায়াযুক্ত জায়গা বেছে নিয়ে টিন, চাটাই, বাঁশ দিয়ে ঘর তৈরি করতে হয়। ঘরে যাতে আলো ঢুকতে না পারে, তার জন্য বাঁশের বেড়ায় মাটির প্রলেপ দিতে হয়। বীজ প্লাস্টিকের প্যাকেটে জল দিয়ে ৩০ মিনিট ডুবিয়ে তারপরে উঠিয়ে ছায়াযুক্ত ঘরে প্যাকেটজাত করে ঝুলিয়ে রাখতে হয়। সেখানে প্রয়োজন মতো প্রতিদিন জল দিতে হয়। এরপর সেই প্লাস্টিকের প্যাকেটগুলির মুখ খুলে রাখার কিছুদিন পরে মাশরুম খাবার উপযুক্ত হয়।