• গল ব্লাডারে পাথর, হাসপাতাল হাসপাতাল ঘুরে রোগীর খরচ যা দাঁড়াল, পরিমাণ শুনলে চমকে যাবেন ...
    আজকাল | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • মিল্টন সেন,হুগলি: গলব্লাডার থেকে ল্যাপারোস্কপি করে পাথর বের করেতে গিয়ে বিপত্তি। রোগীর জীবন সংশয় বুঝতে পেরে নার্সিংহোম থেকে সরকারি হাসপাতাল হয়ে কলকাতার বেসরকারী হাসপাতালে পৌঁছল রোগী। প্রাণ বাঁচলেও চিকিৎসার খরচ ধার্য হয়েছে প্রায় ২৩ লক্ষ। গয়না বন্দক দিয়ে, স্বাস্থ্য বীমা সব মিলিয়ে সাড়ে ১১ লক্ষ টাকা মেটানো হয়েছে। তবু হাসপাতালের বিল সম্পূর্ণ মেটাতে না পারায় রোগীর ছুটি কবে হবে, তা জানা যাচ্ছে না নিশ্চিতভাবে! গল ব্লাডারে পাথর, অস্ত্রোপচার যদিও খুবই সাধারণ বিষয়। কিন্তু সেই সাধারণ অস্ত্রোপচারে বিপুল খরচের বোঝা। জলের মত টাকা খরচ আর রোগীর জীবন সংশয় হবে ভাবতেই পারেনি রাউত পরিবার।চুঁচুড়ার সাহাগঞ্জ পাত্র পুকুরের বাসিন্দা সঙ্গিতা রাউত(৪৬)। পেশায় তিনি শ্রীরামপুর ওয়ালস হাসপাতালের একজন গ্রুপ ডি স্বাস্থ্য কর্মী। সম্প্রতি তাঁর গল ব্লাডারে পাথর ধরা পড়ে। অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন চিকিৎসক। এরপর চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালের শল্য চিকিৎসক প্রকাশ সামন্তর কাছে রোগীকে নিয়ে যায় তার পরিবার। চিকিৎসক তাঁকে চুঁচুড়ার একটি বেসরকারী নার্সিংহোমে ল্যাপারোস্কপি করেন। গত ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ সেই অপারেশন হয়। 

    সবকিছুর পরেও সমস্যা মিটছিল না। অস্ত্রোপচারের পরেও রোগীর পেট ক্রমশ ফুলতে থাকে, আরও একাধিক সমস্যা দেখা দেয়। দশদিন হাসপাতালে ভর্তি বাড়ি ফিরে আবার সেই সমস্যা দেখা দেয়। আবার  হাসপাতালে ভর্তিন হন, ছুটি মেলে কিন্তু তিনি সুস্থ হন না পুরোপুরি। বলা হয় নার্সিঙ্ঘোমে ভর্তি হতে। নার্সিংহোম জানিয়ে দেয় তাদের সেই পরিকাঠামো নেই। তাই আবারও চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয় হয় সঙ্গীতাকে। হাসপাতালে রোগীর অবস্থার অবনতি হলে কলকাতায়  রেফার করে দেওয়া হয়।সঙ্গীতার ছেলে অনিকেত জানিয়েছেন, আনন্দপুরে এক বেসরকারি হাসপাতালে তিনি নিয়ে যান মা’কে। ওই হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু হয়। মেডিক্লেমের টাকা শেষ হওয়ার পরে সে আরও ৭ লক্ষ টাকা হাসপাতালে জমা দেন তিনি। কুড়ি দিনে হাসপাতালে ২২ লক্ষ ৬৩ হাজার টাকা বিল হয়েছে। নিজেদের পরিবারের আত্মীয়-স্বজনের গয়না বন্দক দিয়ে টাকা জোগাড় করেছে অনিকেত। কিন্তু কোনও ভাবেই সম্পূর্ণ টাকা জোগার করতে পারেননি। তবে এখন সুস্থ সঙ্গীতা। চিকিৎসক জানিয়েছেন, পেটে ইনফেকশন ছিল। ঠিক হলে আবার অস্ত্রোপচার করতে হবে। তখন আরও টাকা দরকার হবে। সঙ্গীতার স্বামী অঞ্জন রাউত হুগলি মহসীন কলেজের গ্রুপ ডি কর্মী। তিনি কিডনির অসুখে ভুগছেন। স্ত্রীর চিকিৎসার এই বিপুল খরচ তাঁর পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব নয়। মুখ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য দপ্তর এবং হুগলি জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকের দপ্তরের চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছেন। জানিয়েছেন, প্রয়োজনে ডাক্তার প্রকাশ সামন্তর বিরুদ্ধে ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করবেন। এই প্রসঙ্গে চিকিৎসক প্রকাশ সামন্ত জানিয়েছেন ওই পরিবার তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। অস্ত্রোপচার হয়েছে এক মাসের বেশি হয়ে গেছে। তার পর কিছু হয়েছে কিনা সেটা তিনি বলতে পারবেন না। হুগলি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মৃগাঙ্ক মৌলিকর বলেছেন, তাঁকে আগে জানতে হবে ঘটনা প্রসঙ্গে বিস্তারিত। পরিবারের তরফে অভিযোগ জানানো হলে, ঘটনা তদন্ত করে দেখা হবে।
  • Link to this news (আজকাল)