আত্মহত্যা নয়, খুনই করা হয়েছে ট্যাংরার একই পরিবারের ৩ সদস্যকে! দাবি ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে
প্রতিদিন | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
অর্ণব আইচ: ট্যাংরার বাড়িতে একই পরিবারের তিনজন সদস্যের মৃত্যুর ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে চাঞ্চল্যকর তথ্য। আত্মহত্যা নয়, খুন করা হয়েছে বলছে প্রাথমিক রিপোর্ট। দুই জায়ের হাতে ও নলিতে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এমনকী আরেক নাবালিকা সদস্যের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। যা দেখে প্রাথমিক ধারনা, তিনজনকেই খুন করা হয়েছে।
ট্যাংরার বাড়ির দুটি ঘর থেকে উদ্ধার হয় ২ মহিলার হাতের শিরাকাটা রক্তাক্ত দেহ। পাশের ঘরে মৃত অবস্থায় পড়েছিল এক নাবালিকা। জানা গিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার রাতে। ওইদিন গড়ফা থানা এলাকায় মেট্রোর পিলারে ধাক্কা দেয় একটি গাড়ি। ২ ভাই জখম হন, নাম প্রসূন ও প্রণয় দে। সঙ্গে ছিল প্রণয়ের ছেলে প্রতিপও। ঘটনার তদন্ত শুরু হতেই রহস্য আরও ঘনীভূত হয়। দুই ভাইয়ের দাবি ছিল, গোটা পরিবার দেনায় ডুবেছিল। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার উপায় ছিল না। তাই আত্মহত্যার পথ বেছে নেন তাঁরা। এদিকে মৃত রোমি দে-র বাবার তরফে ট?্যাংরা থানায় লিখিত অভিযোগে জানানো হয়েছে, তাঁর মেয়েকে খুন করা হয়েছে। এই লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করা হয়েছিল। কলকাতা পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মাও জানিয়েছিলেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে তারপরই মৃত্যুর কারণ বলা যাবে। বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে ময়নাতদন্ত চলে। প্রক্রিয়া শেষে প্রাথমিক রিপোর্টে খুনের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, রোমি দে দুই হাতের শিরা কাটা ছিল। গলা কাটা হয়েছিল বাম থেকে ডানদিক বরাবর। একইরকম আঘাতের চিহ্ন ছিল আরেক জা সুদেষ্ণার হাত এবং গলায়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলেই দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলে ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়েছে। আরেক মৃতা প্রিয়ম্বদার বুক, দুই পা, ঠোঁট এবং মাথায় কালশিটের দাগ রয়েছে। দুই হাত এবং পায়ে রক্ত জমাট বেঁধে গিয়েছিল। হজম হওয়া খাবার থেকে ওষুধের গন্ধ পাওয়া গিয়েছে। যা থেকে মনে করা হচ্ছে, খাবারের বিষ মেশানো ছিল। তা থেকেই মৃত্যু প্রিয়ম্বদার। যা দেখে ময়নাতদন্তকারীদের ধারণা, তিনজনকেই খুন করা হয়েছে।
পুলিশের নজরে ট্যাংরার দে বাড়ির তিনতলাও। দুই জায়ের হাতের শিরা কাটতে নটরাজ কোম্পানির পেপার কাটিং ছুরি ব্যবহৃত হয়েছে। যা পাওয়া গিয়েছে ওই তিনতলা থেকে। সূত্রের দাবি, তিনতলায় রান্নাঘর ও ডাইনিং হলের জন্য ব্যবহার করা হত। তিনতলার ডাইনিং হল ও শৌচাগারের দেওয়াল ও মেঝেতে রক্তের দাগ মিলেছে। ফিনকি দিয়ে রক্ত ছিটকে যেমনভাবে রক্তপাত হয় তেমন রক্তের দাগ তিনতলার দেওয়াল ও মেঝেতে দেখা গিয়েছে। যা দেখে পুলিশ মনে করছে, তিনতলায় শিরা কাটা হতে পারে। দেহ যখন উদ্ধার হয় তখন দেখা গিয়েছিল, দেহ বিছানার উপর চিৎ হয়ে পড়ে। রক্তে ভেসে গিয়েছে বিছানা। যা দেখে তদন্তকারীদের দাবি, হাতের শিরা কাটার পর সম্ভবত ছুটে দোতলার ঘরে এসেছিলেন সুদেষ্ণা ও রোমি। অথবা তাঁদের এনে শুইয়ে দেওয়া হয়েছে। যার ফলে বিছানায় রক্তবন?্যা বয়েছে।