• ইউক্রেনের যুদ্ধের জেরেই সর্বস্বান্ত ট্যাংরার দে পরিবার? ঋণে জর্জরিত হয়েই মৃত্যুর পথে?
    প্রতিদিন | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • স্টাফ রিপোর্টার: ইউক্রেন যুদ্ধ না গ্রোমোটিংয়ে বিপুল টাকা লগ্নি করার ফলেই ব্যবসায় মন্দা? ট্যাংরা-কাণ্ডের তদন্ত শুরু করে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ। পুলিশের কাছে খবর, প্রোমোটিংয়ে লগ্নি ছাড়াও রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে তাঁদের রপ্তানির ব্যবসায় মন্দা শুরু হয়। তার উপর ‘নতুন ভেনচার’ এর জেরে প্রচুর টাকা ঋণ হয়ে যায়। পাওনাদারদের লাখ লাখ টংকার চেক বাউন্স হয়ে যাচ্ছিল। টাংরায় বাড়ি আর কারখানায় সামনে পাওনাদাররা দাঁড়িয়ে থাকতেন। এক পাওনাদারের দাবি, তিনি সাড়াশব্দ না পেয়ে বাড়ির সামনে একটি চিরকুটেও লিখে যান যে, তিনি এসেছিলেন। পুলিশের মতে, পাওনাদারের সঙ্গে সঙ্গে ছিল কিছু ঋণদাতা সংস্থারও বিপুল চাপ। পুলিশের প্রশ্ন, সেই কারণেই কি পরিবারের তিনজনকে খুন করে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত, না কি সমবেত হয়ে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েও ‘সফল’ হতে পারেনি দে পরিবার?

    শীল লেনের ‘সুর ফ্যাক্টরি’ বড় জায়গা নিয়ে। “প্রোটেকটিভ লেদার গ্লাভস’-এর ঝাঁ চকচকে কারখানা। কারখানা তৈরি করেছিলেন দে পরিবারের কর্তা প্রণয় ও প্রসুনের বাবা প্রদীপকুমার দে। ট্যাংরার লোকেরা প্রদীপবাবুকে চিনত ‘পি কে’ নামে। সিপিএমের প্রয়াত নেতা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বন্ধু ছিলেন তিনি। ট্যাংরার সিপিএম নেতাদের সঙ্গেও ছিল অত্যন্ত সখ্যতা। তিনি চামড় চামড়ার গ্লাভস ও অন্যান্য সামগ্রী তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি ও দেশের বিভিন্ন শহরে সরবরাহ করতে শুরু করেন। প্রায় বারো বছর আগে বাবার মৃত্যুর পর প্রণয় দে ও প্রসূন দে-দুই ভাই মিলেই ব্যবসা দেখতে শুরু করেন। কারখানায় দুই শিফটে কাজ করেন প্রায় ৫০ জন। পুলিশ ও এলাকার সূত্রের খবর, এর মধ্যেই দুই ভাই ট্যাংরা এলাকার এক প্রোমোটারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে প্রোমোটিং করতে শুরু করেন।

    তার জন্য ব্যবসা থেকে রোজগারের বিপুল টাকাই প্রোমোটিংয়ে লগ্নি করেন তাঁরা। প্রথম দফায় একটি পাঁচতলা বাড়ি নির্মাণও করেন। এর পরও লগ্নি করতে থাকেন প্রোমোটিংয়ে। একাধিকবার পরিবার নিয়ে বিদেশ ভ্রমণ করেন। মাঝেমধ্যেই দুই ভাইয়ের পরিবার একসঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যেত। বাড়িতে প্রায়ই চলত পার্টি। ২০২০ সালে লকডাউনের সময় ব্যবসায় প্রথম ধাক্কা খায় দে পরিবার। রপ্তানির পরিমাণ কমতে থাকে। কারখানার এক কর্মী জানান, দু’তিনটে ‘নতুন ভেঞ্চার’ করতে শুরু করেন তাঁরা। তার জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণও নেন। সেই ঋণ প্রত্যেক মাসে মেটাতে হত। এর মধ্যেই রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধ হয়। তার উপর সামগ্রী নিয়েও সমস্যা ছিল। প্রায় আট জন রপ্তানি ব্যবসায়ী বা ‘এক্সপোর্টারের’ মধ্যে পাঁচ জনের সঙ্গেই দে পরিবারের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। তার জেরেই বিরাট আর্থিক অনটনের মুখে পড়েন গোটা পরিবার। তার জেরেই কি এই পরিণতি? উত্তর অজানা।
  • Link to this news (প্রতিদিন)