ফের এক বার ঘাটতি বাজেট পেশ করলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। বৃহস্পতিবার কলকাতা পুরসভার অধিবেশন কক্ষে ২০২৫-২৬ অর্থ বর্ষে ১১৪.৭২ কোটি টাকার ঘাটতি বাজেট পেশ করলেন তিনি। গত অর্থবর্ষে বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১১২ কোটি টাকা। মেয়র জানিয়েছেন, শহর কলকাতায় জল সরবরাহ ও পয়ঃপ্রণালী, সড়ক উন্নয়ন ও সংরক্ষণ, বস্তি পরিষেবা, বাণিজ্যিক প্রকল্প, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সাধারণ খাতে আয় এবং ব্যয় করেছে পুরসভা। কর বাবদ কলকাতা পুরসভা ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে রাজস্ব আদায় করেছে ১,০৪২.২৬ কোটি টাকা। তবে এ বারের বাজেটকে গত বারের বাজেটে প্রতিলিপি বলে আক্রমণ করেছে বিরোধীরা। সঙ্গে দিশাহীন বলেও কটাক্ষ করেছেন তারা।
মেয়র জানিয়েছেন, ২০২৫-২৬ আর্থিক বছরে কর সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ১,৫৮১.৩৩ কোটি টাকা ধার্য করা হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে কর ছাড়া রাজস্ব আয় হয়েছে ৬১৯.৩৭ কোটি টাকা। ২০২৫-২৬ আর্থিক বছরে ১,০৪৬.০১ কোটি টাকা কর ছাড়া রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে রাজস্ব খাতে কলকাতা পুরসভার মোট আয় ৪০০৮,৬৩ কোটি টাকা। ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে রাজস্ব খাতে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫৫২৪.৮৪ কোটি টাকা ধার্য করা হয়েছে। ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরে পুরসভার মোট আয় হয়েছে ৫৭৪৩.৯৮ কোটি টাকা। ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে ৮,০৫৩.৩২ কোটি টাকা। তিনি আরও জানিয়েছেন, ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে আনুমানিক আয় হবে ৫,৫২৪.৮৪ কোটি টাকা। আনুমানিক ব্যয় হবে ৫,৬৩৯.৫৬ কোটি টাকা। ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে প্রারম্ভিক ঘাটতির পরিমাণ ১,১৬৪.৭৩ কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে কলকাতা পুরসভার সংশোধিত আয় হল ৪,০০৮.৬৪ কোটি টাকা। সংশোধিত ব্যয় হল ৩,৬৫৭.১৪ কোটি টাকা। ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে সরকারি খাতে অনুদান পাবে ২৮৯৭ কোটি টাকা।
বাজেট পেশের পর মেয়র বলেন, ‘‘গত বছরের বাজেট অধিবেশনে কাউন্সিলরদের এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প ও ইন্টিগ্রেটেড বরো স্কিম-এর জন্য ওয়ার্ডপিছু বরাদ্দ অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে যথাক্রমে ২৫ লক্ষ থেকে ৩০ লক্ষ এবং ১৫ লক্ষ থেকে ২০ লক্ষ করা হয়েছিল। এই বছরেও এই সকল ক্ষেত্রে সমপরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করা হল। গাড়ি পার্কিং খাতে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ২১ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। গত বারের বাজেটে গাড়ি পার্কিং থেকে আয়ের পরিমাণ ছিল ১৩.৪৬ কোটি টাকা।’’ অর্থাৎ গাড়ি পার্কিং থেকে আয় বেড়েছে ৭.৫৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া বিল্ডিং প্ল্যান অনুমোদনের ক্ষেত্রে সরলীকরণ করে এ বারের বাজেট প্রস্তাবে ২ থেকে ৩ কাঠা জমিতে বাড়ি নির্মাণ করার জন্য অনুমোদন ফি ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনা হল।
৫০ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ অবশ্য এই বাজেটকে গত বছরের বাজেটের প্রতিলিপি বলে আক্রমণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘গত বছর বাজেটে দেখানো হয়েছিল ১১২ কোটির ঘাটতি। আর এ বছর দেখানো হল ১১৪ কোটির ঘাটতি। গত বারের বাজেটের কয়েকটি ডিজিট বদল করে এ বছরের বাজেট তৈরি করা হয়েছে।’’ সজল আরও বলেন, ‘‘কলকাতা পুরসভাকে আর্থিক ভাবে সমৃদ্ধ করার কোনও চেষ্টাই করা হয়নি। কী ভাবে অর্থ খরচ করে শহরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হবে, তারও স্পষ্ট করে উল্লেখ নেই বাজেটে। এই বাজেট এক কথায় দিশাহীন।’’ কংগ্রেসের ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সন্তোষ পাঠক বলেন, গত একুশ বছর ধরে ঘাটতির বাজেট দেখে আসছি, এ বারেও তাই দেখলাম। গত কয়েক বছর ধরেই ঘাটতি বাজেট পেশ করে আসছেন বর্তমান মেয়র। তাই তার থেকে এর বেশি কিছু প্রত্যাশা নেই।