ট্যাংরাকাণ্ডে আরও কিছু তথ্য হাতে পেল পুলিশ। জানা গেল, ঘুমন্ত অবস্থাতেই রোমি দে এবং সুদেষ্ণা দে-র হাতের শিরা কাটা হয়েছিল। এত ‘নিখুঁত ভাবে’ তা করা হয়েছিল যে, দুই মহিলার সচেতন অবস্থায় তা সম্ভব নয়, মত চিকিৎসকদের। তাঁরা ঘুমিয়ে ছিলেন বা অচেতন অবস্থায় ছিলেন বলেই এত ‘নিখুঁত ভাবে’ শিরা কাটা সম্ভব হয়েছে।
ট্যাংরার দে পরিবারের দুই ভাই প্রণয় এবং প্রসূনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে, তাঁরা গলা পর্যন্ত ঋণে ডুবে ছিলেন। কোটি কোটি টাকা ধার হয়ে গিয়েছিল, যা পরিশোধের ক্ষমতা ছিল না তাঁদের। এমনকি, ট্যাংরার ওই চারতলা বাড়িটিও বন্ধক রাখা হয়েছিল। পুলিশ জানতে পেরেছে, মোট ছ’টি ব্যাঙ্ক এবং সংস্থার কাছ থেকে ঋণ নিয়েছিলেন দুই ভাই।
প্রণয় এবং প্রসূনের বয়ান অনুযায়ী, ১৭ ফেব্রুয়ারি, সোমবার তাঁরা সপরিবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। সকলেই ঘুমের ওষুধ খেয়েছিলেন পায়েসের সঙ্গে মিশিয়ে। কিন্তু ঘুম ভেঙে যায় দুই ভাই এবং কিশোর প্রতীপের। রোমি এবং সুদেষ্ণা তখনও ঘুমোচ্ছিলেন। সেই সময়ে তাঁদের হাতের শিরা কেটে এবং গলায় আঘাত করে খুন করা হয়। ১৪ বছরের প্রিয়ম্বদার মৃত্যু হয়েছিল খাদ্যে বিষক্রিয়ার ফলেই।
মৃতদের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলছে, মৃত্যুর অন্তত তিন থেকে ছ’ঘণ্টা আগে তাঁরা শেষ বার খাবার খেয়েছিলেন। মৃত্যু হয়েছিল ময়নাতদন্তের অন্তত ৩৬ থেকে ৪৮ ঘণ্টা আগে। তাঁদের দেহের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে বৃহস্পতিবার দুপুরে। এই হিসাব অনুযায়ী, মঙ্গলবার দুপুর থেকে রাতের মধ্যে কোনও এক সময়ে ঘুমন্ত অবস্থায় দুই বধূকে খুন করা হয়। বাড়ির যে সিসিটিভি ফুটেজ পুলিশ পেয়েছে, তাতে মঙ্গলবার রাত ১২টার পর বাড়ি থেকে বেরোতে দেখা গিয়েছে প্রণয় এবং প্রসূনকে। সঙ্গে ছিল কিশোর। এর পর বুধবার ভোর ৩টে নাগাদ তাঁদের গাড়ি বাইপাসে অভিষিক্তা মোড়ের কাছে একটি পিলারে ধাক্কা মারে। প্রণয়দের দাবি, আত্মহত্যার উদ্দেশ্যেই গাড়িটি নিয়ে তাঁরা ইচ্ছাকৃত ভাবে পিলারে ধাক্কা মেরেছিলেন। তবে সেই দাবির সত্যতা যাচাইয়ের প্রয়োজন রয়েছে, মেনেছেন তদন্তকারীরাও।
রাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে তিন ঘণ্টার বেশি সময় কিশোরকে নিয়ে কোথায় ঘুরছিলেন দুই ভাই? কেনই বা ঘুমের ওষুধের প্রভাব তাঁদের উপর পড়ল না? এখনও স্পষ্ট নয় এমন একাধিক প্রশ্নের উত্তর। দে পরিবারের প্রতিবেশী এবং আত্মীয়েরা জানাচ্ছেন, পরিবারের এই অবস্থার কথা তাঁরা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি।