বাংলায় শুনানির মাধ্যমে ভাষা দিবস উদযাপন হবে কলকাতা হাইকোর্টে
দৈনিক স্টেটসম্যান | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
শুক্রবার ২১ ফেব্রুয়ারি, আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস। বাংলাদেশে অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির জেরে এবার দুই দেশের যৌথ ভাষা দিবস উযাপনে কাঁটছাঁট। তবে বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে উদযাপিত না হলেও রাজ্যের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আলাদাভাবে ভাষা দিবস উদযাপনের কর্মসূচি নিয়েছে। এবার সেই কর্মসূচিতে নতুন সংযোজন। যে ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের স্বীকৃতি, সেই বাংলা ভাষাতেই দিনভর শুনানি হবে কলকাতা হাইকোর্টে। অভিনব এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। বিষয়টি নিয়ে বেশ উৎসাহিত কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবীদের একটি বৃহদ অংশ।
প্রসঙ্গত সাধারণত কলকাতা হাই কোর্টে শুনানির কাজ হয় ইংরেজিতে। ইংরেজিতেই কথা বলতে হয় আইনজীবীদের। কিন্তু এখন দেশের বেশ কিছু হাইকোর্টের আইনজীবীদের ইংরেজির পাশাপাশি হিন্দিতেও সওয়াল করতে দেখা যাচ্ছে। তবে কলকাতা হাইকোর্ট এ ক্ষেত্রে একটু স্বতন্ত্র।সাধারণ এখানে ইংরেজিতে সওয়াল জবাব হয়ে থাকে। শুধুমাত্র সাধারণের বোঝার সুবিধার্থে বেশ কিছু নির্দেশনামা বাংলাতেও তর্জমা করে দেওয়া হয়। এমনকি সুপ্রিম কোর্টের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার নির্দেশনামাও বাংলা-সহ অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষায় প্রকাশিত হয়।
যদিও বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর এই সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু প্রশ্ন চিহ্ন থেকে যাচ্ছে। কারণ, হাইকোর্টের অনেক আইনজীবীই বাংলা বলতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে কী করে বাংলায় শুনানি হওয়া সম্ভব? আবার সওয়াল-জবাব বাংলায় দেওয়া হলেও নির্দেশ ও রায় দেওয়া হবে ইংরেজিতে। আদালতের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, বাংলায় কথা বলা বাধ্যতামূলক নয়। সেই সুবাদে যে সব আইনজীবী বাংলা বোঝেন না বা বলতে পারেন না, তাঁরা চাইলে ইংরেজিতে সওয়াল করতে পারবেন।
কিন্তু হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তের কারণ কী? এ বিষয়ে বিচারপতি বসুর এজলাস সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাষা দিবস উপলক্ষে শুক্রবার হাইকোর্টের ১৯ নম্বর কক্ষের ওই এজলাসে সারাদিনে যত মামলা উঠবে, সবগুলিই বাংলাতেই শুনানি হবে। এভাবেই মাতৃ ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে চাইছেন বিচারপতি। সেই সঙ্গে তাঁর ইচ্ছা, আইনজীবীরা ওই একটি দিন অন্তত বাংলায় সওয়াল করুন। সেজন্য বিচারপতি বসু ওইদিন তাঁর এজলাসে সমস্ত আইনজীবীকে বাংলায় সওয়াল করতে বলবেন বলে আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবস উপলক্ষে আদালতে এভাবেই হোক শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি।
তবে কলকাতা হাইকোর্টে এই প্রচেষ্টা প্রথম নয়। এর আগে প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে টানা এক সপ্তাহ ধরে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মামলার বাংলায় শুনানি হয়েছিল। এ বিষয়ে বিচারপতি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সে সময় বলেছিলেন, তাঁর এজলাসে আসা অনেকেই ইংরেজি জানেন না। ফলে আদালতে কী হচ্ছে অনেকে তা বুঝতে পারেন না। সেজন্য বাংলা ভাষাতেই মামলার শুনানি হতো।