অর্ণব দাস, বারাসত: স্বামীর চাপেই হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে হজরত লস্করকে মারতে বাধ্য হয়েছিল। তা না করলে তাকেও খুন করার হুমকি দিয়েছিল জলিল। পুলিশি হেফাজতে এমনই দাবি করে স্বামীর জন্য ফেঁসে গিয়েছে বলেই বারবার আক্ষেপ করছে দত্তপুকুরে যুবক খুনে ধৃত সুফিয়া খাতুন। যদিও তদন্তকারীদের দাবি, নিজেকে বাঁচাতেই দ্বিতীয় স্বামীর বিরুদ্ধে সে এসব বলছে। আসলে স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলেই হজরতকে হত্যার ব্লু-প্রিন্ট ছকেছিল।
বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলনে বারাসত পুলিশ জেলার সুপার প্রতীক্ষা ঝাড়খড়িয়া জানিয়েছেন, “পরিকল্পনা করেই মদ্যপানের জন্য হজরতকে ফোন করে ডেকেছিল সুফিয়া। হজরতের চুরি-ছিনতাই গ্যাংয়ের সদস্য ছিল জলিল। ছিনতাইয়ের প্রায় ৪০০ গ্রাম সোনা ও নগদ টাকা নিয়ে ভাগাভাগির একটা সমস্যা ছিল। সুফিয়াকেও হজরতের যৌন হেনস্থা করা নিয়ে জলিলের রাগ ছিল। এইসব কারণেই খুন। খুনে ব্যবহৃত হাতুড়ি এবং ধারালো অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে।” তবে মদ্যপানের নাম করে ডেকে গভীর রাতে নয় বরং খুন করা হয়েছিল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে সাড়ে আটটার মধ্যে। এমনটাই উঠে এসেছে পুলিশি তদন্তে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সুফিয়ার ফোন পেয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার মধ্যে জলিলের ভাড়া বাড়ির সামনে চলে এসেছিল হজরত। এরপর সুফিয়াকে সঙ্গে নিয়ে তার প্রথম পক্ষের স্বামীর বাজিতপুরের বাড়িতে মদের ফোয়ারা ওড়াতে চাষের জমি দিয়ে যাওয়ার পথেই ঘটে হত্যাকাণ্ড। তারপর হজরতের মুন্ডু কেটে ব্যাগে ভরে বামনগাছি স্টেশন লাগোয়া কচুপানা ভর্তি ডোবায় ফেলে নিশ্চিন্তে বাড়ি ফিরেছিল মহম্মদ জলিল গাজি। পরের দিন, ৩ ফেব্রুয়ারি ভোরে মুন্ডুহীন দেহ উদ্ধারের পর খেতে পুলিশ ও গ্রামবাসীরা জড়ো হলে ভিড়ের মধ্যে উপস্থিত থেকে সবদিকে নজরও রাখছিল ছিল সে। ভেবেছিল, অকুস্থল থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে মুন্ডু ফেলে আসায় পুলিশ হদিশ পাবে না। তাই যখন মুণ্ডুহীন দেহ উদ্ধারের ঘটনায় তোলপাড় পড়ে গিয়েছে, তখন নিশ্চিন্তে স্ত্রীর সঙ্গে বাড়িতেই স্বাভাবিক জীবন কাটাচ্ছিল। কিন্তু তাল কাটে হজরতের স্ত্রীর রাতের ফোনে।
জলিলের স্ত্রী সুফিয়াকে ফোন করে সে স্বামীর খোঁজ জানতে চায়। কারণ, ঘটনার দিন বাড়ি থেকে বেরনোর সময় হজরত তার স্ত্রীকে জলিলের বাড়ি যাচ্ছে বলেই জানিয়েছিল। কিন্তু সুফিয়া জানায়, জলিল বাড়িতে নেই, এমনকী হজরতের বিষয়ে জানেও না কিছু। এরপরই জম্মু পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করে সে। সেইমত ৪ ফেব্রুয়ারি সকালের বামনগাছি রেল স্টেশন থেকে ট্রেন ধরে কলকাতা স্টেশনে পৌঁছে সেখান থেকে ট্রেনে করেই জম্মু পৌঁছয় জলিল। তবুও মোবাইলে সারাক্ষণ খবরের দিকে নজর ছিল তাঁর, সুফিয়ার সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ কলেও এই বিষয়ে খবর নিত সে।
তবে এই ঘটনায় সুফিয়া গ্রেপ্তার হলে জম্মুর প্রথম আস্তানা পাল্টে পাকিস্তান সীমান্ত সংলগ্ন সাম্বা গ্রামে আশ্রয় নেয় মূল অভিযুক্ত। এই সংক্রান্ত তথ্য ইতিমধ্যেই পুলিশের হাতে এসেছে। তবে সুফিয়ার বয়ান অনুযায়ী, বামনগাছি স্টেশন সংলগ্ন নয়নজুলি খাল সেচেও হজরতের মোবাইলের খোঁজ মেলেনি।