রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে সব আইন জলাঞ্জলি, রেলকে ব্যবহার করায় ক্ষুব্ধ রেলকর্তারা
প্রতিদিন | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
সুব্রত বিশ্বাস: ‘রাজনীতির’ মহাকুম্ভে রেলের অপূরণীয় ক্ষতির অভিযোগ তুললেন রেল কর্তারা। পাশাপাশি কুম্ভ স্পেশাল ট্রেনের ঠেলায় রেগুলার ট্রেনগুলি বাতিল ও অনিয়মিত হয়ে পড়াতে বাড়ছে ক্ষোভ। এমন পরিস্থিতিতে তাঁরা চরম অসুবিধার মধ্যে পড়েছেন বলে অভিযোগ সংরক্ষিত টিকিট কেটে রাখা যাত্রীদের। এই যাত্রীদের বাতিল করা টিকিটে রেলের ভাঁড়ার শূন্য হচ্ছে যেমন, তেমনই অভিযোগ, স্পেশাল ট্রেনগুলি দখল করে কুম্ভে বিনা টিকিটে যাচ্ছেন যাত্রীরা। রেগুলার ট্রেনের কামরাতেও দেখা যাচ্ছে একই দৃশ্য।
রেলকর্তাদের একাংশের অভিযোগ, কুম্ভের জন্য রেলের যা ক্ষতি হবে তা মেটাতে শেষ পর্যন্ত হিমশিম দশা হবে রেলের। পাশাপাশি কুম্ভে যাতে বেশি সংখ্যক যাত্রী যাওয়ার সুযোগ পান, সেজন্য ১৩০০০ ট্রেন চালাচ্ছে রেল। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৫৭ কোটির বেশি পুণ্যার্থী স্নান সেরেছেন সঙ্গমে। বাড়তি স্পেশাল ট্রেন চালাতে রেল যাবতীয় আইন কানুন জলাঞ্জলি দিয়েছে বলেও অভিযোগ। বিভিন্ন রেক থেকে কোচ কেটে ট্রেন চালানোয় ইন্ট্রিগেট রেকের দফারফা হয়েছে। রেল বোর্ডের নির্দেশ রয়েছে, যে ট্রেন যা কোচ নিয়ে আসবে সেই একই কোচ নিয়ে ফিরে যাবে। এমনকী কোচ যাতে আলাদা রঙের না হয় তাও দেখতে হবে। কিন্তু কুম্ভ বাড়তি ট্রেন চালাতে গিয়ে এক ট্রেনের কোচ অন্য ট্রেনে ঢুকিয়ে দেওয়ার ভোগান্তি পোহাতে হবে পরবর্তী সময়ে। কোচ কেটে কেটে সানটিং করিয়ে তাদের আগের রূপে ফেরাতে প্রচুর সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন রেল কর্তারা।
সবচেয়ে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে প্রয়াগরাজ, বেনারস, অযোধ্যার মতো স্টেশনে। যাত্রী সমাগমের জন্য প্রচুর ট্রেন চলছে। জানা যাচ্ছে, একই প্ল্যাটফর্ম দিয়ে আপে ও ডাউনে দুদিকের ট্রেন চালানো হচ্ছে একই সঙ্গে। রেল আধিকারিকদের মতে, এটা ‘কমন লুপ’ সিস্টেম। দুদিকেই চালানো যায়। তবে এটা মূলত লক করা থাকে। অপারেশন আধিকারিকদের নির্দেশ এলে অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে প্রয়োজনে দু’দিকের ট্রেন চালানো হয়। তবে এতে মুখোমুখি সংঘর্ষের আশঙ্কা থাকে। উল্লিখিত স্টেশনগুলোতে এই সিস্টেম ঘনঘন হচ্ছে। ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকছে বলে তাঁদের মত।
এই পরিস্থিতিতে নাস্তানাবুদ বঙ্গবাসী যাত্রীরাও। পূর্ব রেল ইতিমধ্যে বাতিল করেছে কালকা মেল, বিকানের, চম্বল, শিপ্রা, বৈদ্যানাথধাম এক্সপ্রেস-সহ আরও কিছু ট্রেন। দক্ষিণ-পূর্বেও বেশ কয়েকটি ট্রেন বাতিল করেছে। স্পেশাল ঠেলায় অসংখ্য ট্রেন লেটে রান করছে। বিকেলের ট্রেন মাঝরাতে হাওড়া আসছে। ফলে চরম হয়রানির মুখে পড়ছেন যাত্রীরা।
হাওড়া স্টেশন গভীর রাতে যেখানে ফাঁকা থাকার কথা, সেখানে গভীর রাতে হাওড়া এসে হাজার হাজার যাত্রীকে ষ্টেশনেই থাকতে হচ্ছে। যাত্রীদের অভিযোগ, রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে ট্রেনকে এভাবে ব্যবহার করা ঠিক নয়। একদিকে হয়রানি, অন্যদিকে ট্রেনের মধ্যে বিনা টিকিটের যাত্রীদের দৌরাত্ম্য অসহনীয় হয়ে উঠেছে। নষ্ট হচ্ছে রেলের জাতীয় সামগ্রী।