নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: নদীয়া জেলার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের বিশাল এলাকাজুড়ে কাঁটাতার নেই। ফলে ওই এলাকা চোরাকারবারিদের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়েছে। সেখান দিয়ে লাগাতার অনুপ্রবেশও চলছে। এবার সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিতে জমি কেনার কাজে গতি আনছে রাজ্য সরকার। সেজন্য জেলার হাঁসখালি ব্লকের সীমান্তের ৩৩ একর জমি কিনবে রাজ্য। জেলা প্রশাসনের তরফে ওই এলাকার শতাধিক বাসিন্দাকে নোটিস করা হয়েছে। সম্প্রতি একাজের জন্য রাজ্য ক্যাবিনেটের অনুমোদন এসেছে। রাজ্য সরকারের তরফে ৩৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, ওই জমি বিএসএফের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
জেলা পরিষদের সেক্রেটারি অনুপম চক্রবর্তী বলেন, সীমান্তে বেশ কিছু জমি কেনা হয়েছে। হাঁসখালি ব্লকে আরও জমি কেনার কাজ শুরু হয়েছে। সেইমতো আমরা বাসিন্দাদের নোটিস করেছি। নতুনভাবে সার্ভে করে এই জমির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের জনসংযোগ আধিকারিক এন কে পাণ্ডে বলেন, বেশ কিছু এলাকায় কাঁটাতার নেই। জমি কেনার কাজ চলছে। সীমান্ত এলাকার মানুষের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে। জমি চিহ্নিত করাও হচ্ছে।
বিএসএফ জানিয়েছে, নদীয়া জেলার ২০ কিলোমিটার আন্তর্জাতিক সীমান্তে কাঁটাতার নেই। হাঁসখালি ব্লকের সাড়ে নয় কিমি সীমান্ত এলাকা কাঁটাতারবিহীন। এছাড়া, কৃষ্ণগঞ্জ থানা এলাকায় দুই কিলোমিটার, ভীমপুর থানা এলাকায় ছয় কিলোমিটার, করিমপুর সীমান্তে সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকায় উন্মুক্ত সীমান্ত রয়েছে। এই অরক্ষিত সীমান্ত দিয়ে রোজ পাচার, অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে অস্থিরতা দেখা দেওয়ার পর থেকে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কয়েকসপ্তাহ আগেই ভীমপুর থানার কাঁটাতারহীন রাঙিয়াপোতা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ফেরত যাওয়ার পথে এক অনুপ্রবেশকারী মহিলা ও এক দালালকে ধরে ফেলে বিএসএফ ও পুলিস। তাদের জেরা করে সীমান্তের আন্তর্জাতিক নারীপাচার চক্রের হদিস পাওয়া যায়। হাঁসখালি সীমান্ত এলাকা কয়েকমাসে বহু অনুপ্রবেশকারী সহ দালালদের পুলিস গ্রেপ্তার করেছে। কাঁটাতার না থাকায় পাচার ও অনুপ্রবেশ রুখতে খুবই সমস্যা হচ্ছে।
বিজেপির তরফে মাঝেমধ্যেই অভিযোগ তোলা হয়, রাজ্য সরকারের অনীহার কারণেই নাকি কাঁটাতার বসছে না। রাজ্য নাকি সীমান্তে জমি কেনা নিয়ে গড়িমসি করছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, গত তিন-চারবছর ধরে নদীয়া সীমান্তে রাজ্য সরকার কাঁটাতার বসানোর জন্য প্রচুর জমি কিনেছে।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সীমান্তের রানাঘাট-২, কৃষ্ণগঞ্জ, চাপড়া ও করিমপুর ব্লকে রাজ্য সরকার মোট ৪৯একর জমি কিনেছে। যার মধ্যে ৪৩ একর জমি কেন্দ্রকে হস্তান্তর করা হয়েছে। সীমান্তের জমি-সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ বিএলএলআরও এবং সিপিডব্লুডি যৌথভাবেই করে থাকে।
বিজেপি নেতা সন্দীপ মজুমদার বলেন, রাজ্য সরকার জমিজট মেটালেই কাজ হবে। কিন্তু তারা কেন্দ্রের সঙ্গে অসহযোগিতা করে আসছে।চাপড়ার তৃণমূল বিধায়ক রুকবানুর রহমান বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার চায় না যে, আমাদের আন্তর্জাতিক সীমান্ত সুরক্ষিত হোক। আর ওরাই আমাদের রাজ্য সরকারের দিকে আঙুল তোলে। ওদের অভিযোগের কোনও সারবত্তা নেই। আমাদের সরকার সবসময় সীমান্ত সুরক্ষার জন্য সদর্থক ভূমিকা পালন করেছে। সীমান্তে কাঁটাতারহীন এলাকা। বৃহস্পতিবার ছবিগুলি তুলেছেন কাজল বিশ্বাস।