নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ট্যাংরার শীলপাড়া জুড়ে এখন শুধুই গুঞ্জন। দে বাড়ির গলির মুখে প্রতিবেশীদের ভিড়। অনেকে বলছেন, কোথা থেকে যে কী হয়ে গেল! কিন্তু দে বাড়ির যাঁরা ঘনিষ্ঠ, তাঁদের বক্তব্য কিন্তু ‘রহস্যজনক’। তাঁরা ক্যামেরার সামনে আসতে চান না। মন খুলে কথাও বলতে চান না। তবে এদিক ওদিক নানা কথা বলতে বলতে এক বয়স্ক লোকের বক্তব্য, ‘জানি সবই। বললে লাইফ রিস্ক আছে!’ একেবারে লাইফ রিস্ক? জোড় দিয়ে জিজ্ঞেস করতে তিনিও ততধিক জোড়ের সঙ্গে বললেন, ‘অবশ্যই লাইফ রিস্ক আছে। ভিতরের খবর সকলের না জানাই ভালো।’
ট্যাংরার শীল পাড়ার বড়লোক বাড়ি এই দে পরিবার। এলাকায় বনেদি বড়লোক বাড়ি যেমন রয়েছে, তেমনই বস্তিও রয়েছে। প্রসূণ-প্রণয়ের বাবা প্রবীর কুমার দে ২০১২ সালে মারা গিয়েছেন। একটা সময় রমরমা ব্যবসার কারিগর তিনিই। এলাকায় সজ্জন ব্যক্তি বলেই পরিচিত ছিলেন। স্থানীয় পাঁচকড়ি সুর স্কুলেই পড়াশুনা করেছেন তিনি। এলাকায় ‘ছোটুদা’, ‘পিকে’ বলে নামডাক ছিল তাঁর। এদিন পাড়ার লোকের মুখে মুখে দে পরিবারের প্রয়াত কর্তার কথাই ঘুরছে। এক ব্যক্তির কথায়, ‘ছেলেরা পাড়ায় কারওর সঙ্গে খুব একটা মিশতেন না। গাড়ি চেপে বেরতেন। বাজার-হাট করতেও দেখিনি। তবে ছোটুদার বাড়ির এরকম পরিণতি হবে ভাবিনি।’ এককালে দে বাড়ির ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন রতন (নাম পরিবর্তিত)। তিনি বলছিলেন, ‘ওঁদের বাবা খুব ভালো লোক ছিলেন। তাঁর ছেলেরা কেমন ভাবে বাড়ির মেয়েদের মেরে দিল! ওঁর বাবার পুজোআর্চায় মন ছিল। কোনও গুরুদেব-তান্ত্রিকের নির্দেশে এসব করল কি না, কে জানে! তাহলে শুধু মেয়েদের মারল কেন?’ আবার আর এক ব্যক্তি দে বাড়ির কথা শুনতেই রেগে গেলেন। বলছিলেন, ‘এরা সব কেমন লোক, জানতে হবে না! অনেক কাহিনী আছে।’
প্রণয়-প্রসূণদের বাবার সঙ্গেই বড় হয়েছেন এক ব্যক্তি। তিনিও ব্যবসায়ী। তবে নাম বলতে চান না। বলছিলেন, ‘প্রবীরবাবুর জমানো টাকা ছেলেরা ধরে রাখতে পারল না। কিন্তু পরিস্থিতি যে এমন হবে, ভাবতে পারিনি। কাল থেকে আমার বাড়িতেও খাওয়া-দাওয়া হচ্ছে না ঠিক করে। ওঁদের বাবাই ব্যবসাটা দাঁড় করিয়েছিলেন। শুনেছি, ওঁর বাবা শেষের দিকে আধ্যত্মিক পথে চলে যাচ্ছিলেন। আমরা পুরোনো লোক, সবটাই জানি। কিন্তু বলব না। লাইফ রিস্ক আছে।’ তবে ৩০-৩৫ লক্ষ টাকা দেনার জন্য এমন পরিণতি হতে পারে, এই তত্ত্ব মানতে নারাজ তিনি। তাঁর কথায়, ‘ওঁদের সম্পত্তি অনেক। ওই ক’টা টাকার জন্য মনে হয় না এসব করবে।’