এবার দেশি সরাল ছাড়া অন্য পরিযায়ী পাখির দেখাই মিলল না সাঁতরাগাছিতে
বর্তমান | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: শীত পেরিয়ে বসন্ত এসে গিয়েছে। অথচ এবার সেভাবে পরিযায়ী পাখির দেখা মিলল না সাঁতরাগাছি ঝিলে। পক্ষী বিশেষজ্ঞরা ভেবেছিলেন, সংখ্যায় কম হলেও ট্রান্স হিমালয়ান পাখি হয়তো আসবে। কিন্তু কোথায় কী! শীত তো চলে গেল, আর কবে আসবে তারা? লেসার হুইসলিং ডাক বা দেশীয় সরাল বাদে এবার তেমন পাখির ঝাঁকের দেখা মেলেনি। সম্প্রতি সাঁতরাগাছি ঝিলে পক্ষী সমীক্ষার এক রিপোর্ট দেখে হতাশ পাখিপ্রেমীরা।
৩৩ বিঘার সাঁতরাগাছি ঝিল সাফসুতরো রাখার দায়িত্বে ‘নেচার মেট’ নামের একটি সংস্থা। বায়োডাইভারসিটি বোর্ডের নির্দেশে তারা এই কাজ করছে। প্রতি বছর এই সংস্থা দুর্গাপুজোর পর ঝিলের কচুরিপানা কেটে জলের উপরেই বিভিন্ন জায়গায় জড়ো করে। দেখতে হয় অনেকটা আইল্যান্ডের মতো। এই সব আইল্যান্ডেই এসে ভিড় জমায় পরিযায়ী পাখিরা। নভেম্বর থেকে মার্চ— এক সময় এই পাঁচ মাস সাঁতরাগাছি ঝিলের দখল থাকত পরিযায়ী পাখিদের হাতে। ঘুরে বেড়াত ৩০-৩৫ প্রজাতির ডানাধারী। আসত গ্যাডওয়াল, নর্দান পিনটেল, কমন টিলের মতো ট্রান্স হিমালয়ান বহু পাখি। এছাড়াও স্থানীয় পরিযায়ী পাখিদের মধ্যে দেখা মিলত লেসার হুইসলিং ডাক, কমন ইন্ডিয়ান মোরহেনের। প্রতি বছর জানুয়ারির শেষে এই পাখিদের নিয়ে সমীক্ষা চালায় প্রকৃতি সংসদ নামের একটি সংস্থা। তারাই জানিয়েছে, গত বছর সাঁতরাগাছি ঝিলে মাত্র ৪৮০০ পাখি এসেছিল। এরমধ্যে ৪৬০০টি ছিল লেসার হুইসলিং ডাক। এবছর এসেছে ৪১৫২টি পরিযায়ী পাখি। যার পুরোটাই মূলত লেসার হুইসলিং ডাক। কোনও ট্রান্স হিমালয়ান পাখি এখনও চোখে পড়েনি সমীক্ষকদের।
প্রকৃতি সংসদের সম্পাদক সৌম্য রায় বলেন, ‘সরাল বাদে অন্য কোনও পাখি এবছর সাঁতরাগাছি ঝিলে আসেনি। গত বছর তাও ৮-১০টি গ্যাডওয়াল কিংবা কমন টিল এসেছিল। আসলে দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় পাখির আনাগোনা কমেছে। পাশাপাশি রয়েছে খাবারের জায়গার অভাব। সেকারণেই ওরা অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। এছাড়াও অন্যান্য বছর দুর্গাপুজোর পর ঝিল সাফাইয়ের কাজ শুরু হতো। এবার সেই কাজ শুরু হয়েছে অনেক দেরিতে। আসলে টাকা বরাদ্দ না হওয়ায় এই কাজ ঝুলেছিল।’
ঝিল পরিষ্কারের দায়িত্বে থাকা ‘নেচার মেট’ ক্লাবের সম্পাদক অর্জন বসু রায় বলেন, ‘এবছর পরিযায়ী পাখি সাঁতরাগাছি ঝিলে আসবে কি না, তা নিয়ে প্রথম থেকেই সন্দেহ ছিল। তবে সংখ্যায় কম হলেও পরিযায়ী পাখিরা একেবারে আশাহত করেনি।’ পক্ষী বিশেষজ্ঞ ও বার্ড ফটোগ্রাফারদের একাংশের মত, ‘এক সময় এই ঝিলে কম্বো ডাক, ফেরুজিনাস পোচার্ড, সুইনহো’স স্নাইপ, ফুলভাস হুইসলিং ডাক চড়ে বেড়াত। পাখিদের ছবি তুলতে অনেকেই ভিড় জমাতেন ঝিলের আশপাশে। এখন আর কেউ সেরকম আসেন না।’ নিজস্ব চিত্র