• সাজছে হাতিদের ‘সব–পেয়েছির দেশ’
    এই সময় | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • দুর্গাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, বাঁকুড়া

    সেই কবে থেকেই ওদের অবাধ বিচরণ দক্ষিণবঙ্গে। ক্রমশ বাড়ছে সংসারও। ওরা দলমার দামাল। খাবারের খোঁজে জঙ্গল ছেড়ে প্রায়ই গ্রামেগঞ্জে ঢুকে পড়ে। লোকালয়ে ওদের এই আচমকা হানা রুখতে এ বার বিশেষ কৌশল নিয়েছে বন দপ্তর। হাতিরা যাতে জঙ্গলেই থাকে তার জন্য জঙ্গলের অন্দরে অতিরিক্ত খাদ্য ভাণ্ডারের বিকাশ ঘটাতে শুরু হয়েছে কর্মযজ্ঞ। বসানো হচ্ছে হাতির বিভিন্ন প্রিয় গাছের চারা। যা ওদের মুখের স্বাদেও বদল আনবে।

    আগামী দিনে সেই খাদ্য ভাণ্ডার বৃদ্ধি পেলে জঙ্গলের মধ্যেই হাতিরা শান্তিতে থাকবে বলে মনে করছেন বন কর্তারা। নিশ্চিন্তে থাকবে জঙ্গল লাগোয়া পাড়াগুলোও। বন দপ্তর সূত্রে খবর, হস্তিকুলকে সায়েন্টিফিক্যালি ম্যানেজ করার এই বিশেষ প্ল্যান নেওয়ার পর বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন ডিভিশন পরিদর্শন করেন দপ্তরের শীর্ষ কর্তারা। ঘুরে দেখেন কোন কোন এলাকা হাতির জন্য উপযুক্ত। সেই মতো ভিতরে জল ও খাবার রয়েছে এমন দক্ষিণবঙ্গের প্রায় ২২টি বড় জঙ্গলকে চিহ্নিত করেন তাঁরা।

    তার মধ্যেই তিন জেলার সাতটি এলাকায় কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে গত বছর থেকেই। এর মধ্যে তিনটি জঙ্গল বাঁকুড়া উত্তর বন বিভাগ এলাকায়। রয়েছে বড়জোড়ার জঙ্গল, বেলিয়াতোড়ের বৃন্দাবনপুর বিটের কাঁটাবেশিয়া জঙ্গল ও সোনামুখীর হামিরহাটি বিটের তেতুলবাঁধ জঙ্গল। ওই সব জঙ্গলে চাষ করা হচ্ছে হাতির পছন্দের বিভিন্ন খাবারের। রোপণ করা হচ্ছে কাঁঠাল, ডুমুর, কয়েতবেল, বট, চালতা, কলা প্রভৃতি গাছের চারা। বসানো হচ্ছে হাতির প্রিয় বিশেষ ধরনের ঘাসের চারাও।

    বুধবার বেলিয়াতোড়ে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক সাক্ষাৎ পর্বে মুখ্য বনপাল (কেন্দ্রীয় চক্র) এস কুলানডাইভেল বলেন, ‘আমরা হাতিদের জন্য মাইক্রো হ্যাবিট্যাট ডেভেলপ করছি। চেষ্টা করছি জঙ্গলের ভিতরে হাতিদের পছন্দ মতো খাবার তৈরি করার। এই কাজ করতে কমপক্ষে পাঁচ বছর লাগবে। প্রতি বছরই ওই সব জঙ্গলে হাতির পছন্দের বিভিন্ন গাছ লাগানো হবে। আগামী ১০ বছরের মধ্যে হাতিদের খাবার অনেকটা বেড়ে যাবে।’ জঙ্গলের মধ্যে জলের জন্য প্রয়োজন মতো অতিরিক্ত পুকুর খননের প্ল্যানও রয়েছে বন কর্তাদের। এই মুহূর্তে দক্ষিণবঙ্গে প্রায় ১৮০টি হাতি রয়েছে। তার মধ্যে উত্তর বাঁকুড়াতেই রয়েছে প্রায় ৬৮টি। গত ডিসেম্বর মাস থেকে সেই দলের সিংহভাগই রয়েছে বড়জোড়ার পাবয়ার জঙ্গলে। খান কয়েক বিক্ষিপ্ত ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে এ দিক–ও দিক।

    মুখ্য বনপাল (কেন্দ্রীয় চক্র) বলেন, ‘বড়জোড়ায় হাতিদের থাকার ব্যবস্থা ভালো আছে। ভালো জঙ্গল আছে। জঙ্গলের ভিতরে যথেষ্ট খাবার আছে। সাতটি বড় পুকুরও আছে। মানুষ ওদের ডিসটার্ব করছে না, ওরাও মানুষকে ডিসটার্ব করছে না।’ হাতিরা জঙ্গলের ভিতরেই থাকায় এ বার এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি তেমন হয়নি বলে দাবি বন দপ্তরের। এস কুলানডাইভেল বলেন, ‘এ বার হাতি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা থেকে বাঁকুড়ায় ঢুকে বাঁকাদহ, জয়পুর, রাধানগর, সোনামুখী, বেলিয়াতোড়, বড়জোড়া এই রাস্তা ধরে আসার সময় যতটুকু ক্ষতি হয়েছে। তার পর হাতি এখন বড়জোড়ার জঙ্গলেই রয়েছে। দু’একটা হাতি মুভ করে। তাতে অল্পস্বল্প ফসল নষ্ট হয়েছে।’ তাঁর কথায়, ‘হাতি যাবে–আসবে। এটা হাতির বিহেভিয়ার। সেই ভাবে আমাদের ম্যানেজমেন্টও চলবে।’

  • Link to this news (এই সময়)