এই সময়: বিধানসভায় রাজ্য বাজেট বিতর্কে অংশ নিয়ে বুধবার তাজপুর থেকে ডেউচা–পাঁচামি— রাজ্যের একাধিক ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ ও রাজ্য সরকারের আর্থিক অবস্থা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তুলেছিলেন বিজেপি বিধায়ক তথা অর্থনীতিবিদ অশোক লাহিড়ি। অথচ, সেই সব প্রশ্নের উত্তর শুনতে বৃহস্পতিবার সভায় গরহাজির রইলেন বালুরঘাটের বিধায়ক।
বৃহস্পতিবার বাজেট বিতর্কের জবাবি ভাষণে অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য কটাক্ষ করে বলেন, ‘অশোক লাহিড়ি বিশ্ববরেণ্য অর্থনীতিবিদ। কিন্তু, আমাদের উত্তর দেওয়ার সুযোগ দিলেন না। কারণ, উনি এখানে নেই।’
কেন এ দিন বিধানসভায় থাকলেন না অশোক?
বিজেপি বিধায়কের বক্তব্য, ‘আমার দিল্লিতে পূর্ব–নির্ধারিত কর্মসূচি ছিল। বিধানসভার অধ্যক্ষকে জানিয়েছিলাম। আর আমার প্রশ্নের উত্তর উনি (অর্থমন্ত্রী) দিতে পারতেন না। ওঁর কাছে উত্তর থাকলে বলুন। গোটা পশ্চিমবঙ্গ জানতে চাইছে। উনি উত্তর দিয়ে জানান যে আমি ভুল।’
এ নিয়ে বিধানসভা অধিবেশনের পরে চন্দ্রিমার পাল্টা জবাব, ‘উত্তর দিতে পারতাম কি না, তা সভায় হাজির থেকে বসে দেখতেন। উনি তো ছিলেনই না।’
বৃহস্পতিবার বাজেট বিতর্কের জবাবি ভাষণ দিতে যখন চন্দ্রিমা ওঠেন, সে সময়ে সভায় ৩–৪ জন বিজেপি বিধায়ক ছিলেন। মন্ত্রী বক্তব্য শুরু করার ২–৩ মিনিটের মধ্যে একে একে তাঁরাও সভাকক্ষ ত্যাগ করেন। এতে চন্দ্রিমা বলেন, ‘বিরোধী দলের তরফে উত্তর শুনতে কেউ নেই। এতে দুঃখ হয়। ভেবেছিলাম ডক্টর লাহিড়ি থাকবেন। তাঁর থেকে জানব, শিখব। শিখতে তো কোনও অসুবিধা নেই। আইএমএফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের উচ্চ পদে ছিলেন। ওঁকে আয়কর দিতে হতো না।’
মন্ত্রীর দাবি, অশোক লাহিড়ির দেওয়া তথ্য নস্যাৎ করার জন্য তাঁর কাছে যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে।
এ দিন অর্থমন্ত্রীর জবাবি ভাষণের সময়ে কোনও বিরোধী সদস্যের না থাকা নিয়ে পরে ঊষ্মা প্রকাশ করেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘মন্ত্রীর বক্তব্য শুরু হওয়ার পরে একে একে বিরোধী সদস্যরা চলে গেলেন। যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক এবং বাঞ্ছনীয় নয়। আশা করি ভবিষ্যতে তাঁরা বিধানসভার রীতি–নীতি মেনে চলবেন। না হলে আমাকে অন্য রকম ভাবনা–চিন্তা করতে হবে।’
যা শুনে বিধানসভায় বিরোধী দলের সচেতক শঙ্কর ঘোষের প্রতিক্রিয়া, ‘ওঁর সর্বোচ্চ ক্ষমতা আছে। স্পিকার একে একে আমাদের সদস্যদের সাসপেন্ড করেছেন। তিনি চাইলে সবাইকে বিধানসভার বাইরে বের করে দিতে পারেন।’
রাজ্য সরকারের তাজপুর সমুদ্রবন্দর, ডেউচা–পাঁচামি কয়লা খনি প্রকল্প, ছ'টি ইকোনমিক করিডর তৈরিতে কোথা থেকে টাকা আসবে বলে বুধবার প্রশ্ন তুলেছিলেন অশোক লাহিড়ি। তাঁর প্রশ্ন, ‘ডেউচা–পাঁচামির জন্য একটি কোম্পানি তৈরি করা হয়েছে, যার পেড–আপ ক্যাপিটাল মাত্র দশ কোটি টাকা। এই সামান্য পেড–আপ ক্যাপিটাল যে কোম্পানির, তারা কী ভাবে এত বড় প্রকল্প নির্মাণ করবে? কারা বিজ়নেস পার্টনার?’
তিনি জানিয়েছিলেন, তাজপুরে যদি সমুদ্রবন্দর না হয়, তা হলে রঘুনাথপুর থেকে ইকোনমিক করিডর তাজপুরে গিয়ে কী হবে? রাজ্য সরকারের কোষাগারে টাকা না–থাকার কারণেই বাজেটে প্রস্তাবিত মূলধনী ব্যয় বাজেটের মাত্র ৩.৪৪% বলে তাঁর যুক্তি। রাজ্যে বিপুল কর্মসংস্থান নিয়ে সরকারের দাবির প্রেক্ষিতে অশোকের প্রশ্ন, ‘বেকারত্ব যদি এত কমে যায়, তা হলে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকরা কি দেশ ভ্রমণে বেরিয়েছেন?’
বিজিবিএসে মোট প্রস্তাবিত লগ্নির কতটা এখনও পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়েছে, সেটাও তিনি রাজ্যের কাছে জানতে চান।
যদিও এ সব কোনও প্রশ্নেরই জবাব এ দিন অর্থমন্ত্রী বিধানসভায় দেননি। তবে বৃহস্পতিবার মন্ত্রীর জবাবি ভাষণের সময়ে কেন বিজেপির কোনও বিধায়ক সভায় থাকলেন না, তা নিয়ে যুক্তি দিয়েছেন শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর। তিনি বলেন, ‘বিরোধী দলনেতা–সহ চারজনকে বিধানসভা থেকে সাসপেন্ড করা, মহাকুম্ভকে মুখ্যমন্ত্রীর মৃত্যুকুম্ভ বলা ও আরও কয়েকটি বিষয়ে আমরা রাজ্যপালকে স্মারকলিপি দিতে রাজভবনে গিয়েছিলাম। উনি আমাদের বিকেল চারটেয় সময় দিয়েছিলেন। রাজ্যপালকে সম্মান জানাতে বিধানসভা থেকে আমাদের আজ বেরিয়ে যেতে হয়েছে। আর তৃণমূল তো নিজেদের অনুষ্ঠান করার সময় বিধানসভা বন্ধ–ই রেখে দেয়।’