ভরা ফাল্গুনে ঝড়বৃষ্টিতে ভিজল গাঙ্গেয় বঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা। এতে বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা কমে, মেলে স্যাঁতস্যাঁতে ঠান্ডা ভাব। তবে ঝড়বৃষ্টির জেরে লোডশেডিংয়ে নানা জেলায় পরীক্ষাকেন্দ্রে সমস্যায় পড়েছে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা। ঝড়বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকা সত্ত্বেও বহু জায়গায় কেন বিকল্প আলো বা জেনারেটরের ব্যবস্থা ছিল না, উঠছে প্রশ্ন। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের এক কর্তা জানান, ঝড়বৃষ্টিতে পরীক্ষাকেন্দ্র অন্ধকার হয়ে সময় নষ্ট হলে পরীক্ষার্থীদের অতিরিক্ত সময় দেওয়া যেতে পারে বলে তাঁরা ভেনু সুপারভাইজ়র এবং সেন্টার ইনচার্জদের জানিয়েছিলেন।
ঝড়বৃষ্টিতে ক্ষতি হয়েছে চাষেরও। তবে বড় ক্ষতির আশঙ্কা নেই বলেই দাবি করছেন কৃষিকর্তারা। পুরুলিয়ায় বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে এক জনের। আহত ছ’জন। আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে তেলঙ্গানা পর্যন্ত একটি অক্ষরেখা বিস্তৃত আছে। তার ফলে প্রচুর জলীয় বাষ্প দক্ষিণবঙ্গে ঢুকছে। সেই জলীয় বাষ্পের প্রভাবেই এই পরিস্থিতি। আগামী রবিবার পর্যন্ত ঝড়বৃষ্টির পূর্বাভাসও দিয়েছে হাওয়া অফিস।
প্রশাসন জানিয়েছে, এ দিন পুরুলিয়ার বোরো থানার আঁকরো গ্রামে ইটভাটায় কাজ করার সময় বজ্রপাতে জবা মুদি (৪০) নামে এক মহিলা শ্রমিকের মৃত্যু হয়। আহত হন ছ’জন শ্রমিক। বাঁকুড়ার বড়জোড়া, পাত্রসায়র ও ইন্দাসে বৃষ্টি হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া স্টেশন বাজারে জল জমে পরীক্ষাকেন্দ্রের পথে সমস্যায় পড়ে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা।
পশ্চিম মেদিনীপুরের কিছু ব্লকে আলু ও ধানের খেতে জল জমেছে। শিলাবৃষ্টিতে গোয়ালতোড়ের আলু চাষে ক্ষতি হয়েছে। চন্দ্রকোনা রোডে ঝোড়ো হাওয়ায় ভেঙেছে লাউ ও করলার মাচা। ঝাড়গ্রাম জেলা কৃষি দফতরের এক আধিকারিক অবশ্য জানান, এই সময়ে বৃষ্টি হলে তা বোরো ধান চাষের পক্ষে সুবিধাজনক।
বৃষ্টিতে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে লোডশেডিংয়ে সমস্যায় পড়তে হয় উলুবেড়িয়া-২ ব্লকের খলিসানি জাতীয় বিদ্যাপীঠে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের। স্কুল মোমবাতির ব্যবস্থা করে। ব্লক প্রশাসন জেনারেটরও পাঠায়। পরে বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীরা পরিস্থিতি সামলান। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাটের রাধানগর ভূতনাথ মেমোরিয়াল হাই স্কুল, উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত ১, আমডাঙা ও দেগঙ্গা ব্লকের অনেক পরীক্ষাকেন্দ্রেও লোডশেডিংয়ে সমস্যা হয়। দেগঙ্গার চৌরাশি হাই স্কুলের পরীক্ষাকেন্দ্রে সেন্টার ইনচার্জের নির্দেশে পরে ৪৫ মিনিট অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয় পরীক্ষার্থীদের। লোডশেডিংয়ে ভাঙড়-২ ব্লকের কচুয়া হাই স্কুল, ভাঙড়-১ ব্লকের তাড়দহ হাই স্কুল, খড়ম্বা হাই স্কুলেও সমস্যায় পড়ে পরীক্ষার্থীরা।
পূর্ব বর্ধমানের কালনা শহর আর পূর্বস্থলী ১ ও ২ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় লোডশেডিংয়ে সমস্যায় পড়ে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা। পর্ষদের জেলা উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য দেবব্রত মণ্ডল জানান, পরীক্ষাকেন্দ্রগুলিতে জেনারেটর না থাকায় সমস্যা হয়েছে। বর্ধমান শহর, গলসিতে লোডশেডিং হলেও পরীক্ষায় সমস্যা হয়নি বলে দাবি। বৃষ্টিতে আউশগ্রামের ভাল্কিতে জঙ্গলে পরীক্ষার্থীদের একটি টোটো বিকল হলে বনকর্মীরা গাড়িতে চাপিয়ে তাদের পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দেন।
বৃষ্টির পূর্বাভাসে চিন্তায় হুগলির অনেক আলুচাষি। জেলার উপ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) মৃত্যুঞ্জয় মুর্দ্রান্য বলেন, “এ পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগ কিছু নেই। কিছু জায়গায় বৃষ্টি হয়েছে। জল জমি থেকে বেরিয়েও যাচ্ছে।”