আইনজীবীদের তিন দিন ব্যাপী দিন-রাতের ক্রিকেট প্রতিযোগিতার জেরে কার্যত অচলাবস্থা চলছে দেওয়ানি ও ফৌজদারি ৪২টি আদালতে। আলিপুর আদালত সূত্রের খবর, সেই আদালতের এক আইনজীবীর প্রয়াত বাবার স্মরণে মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ওই ক্রিকেট প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। তাতে অংশ নিয়েছে আইনজীবীদের ২৪টি দল। প্রতিটি দলে ছ’জন করে আইনজীবী রয়েছেন।
এই প্রতিযোগিতার জন্য ফৌজদারি ও দেওয়ানি আদালতের আইনজীবীদের সংগঠনের তরফে ১৭ ফেব্রুয়ারি বিচারকদের কাছে আবেদনে বলা হয়, বাদী ও বিবাদী, দু’পক্ষই উপস্থিত না থাকলে কোনও নির্দেশ বা রায় ঘোষণা করা যাবে না (নট টু পাস এনি অ্যাডভার্স অর্ডার)। সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার বিচার প্রক্রিয়া তিন দিন ধরে বন্ধ থাকছে। এক পক্ষের আইনজীবী হাজির থাকলেও অপর পক্ষের আইনজীবী অনুপস্থিত থাকায় বিচার প্রক্রিয়া পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলেও সূত্রের খবর। এর জেরে আলিপুর ফৌজদারি ও দেওয়ানি আদালতের জেলা বিচারকের এজলাস-সহ প্রায় ৩০টি আদালতের নানা মামলার বিচার প্রক্রিয়া তিন দিন ধরে প্রায় বন্ধ রয়েছে। অভিযোগ, দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রত্যন্ত এলাকা এবং কলকাতার বিচারপ্রার্থীরা মামলার দিন ও তারিখ ধার্য হওয়া সত্ত্বেও শুনানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এ ছাড়াও মাধ্যমিক পরীক্ষার সময়ে বিকেল ৪টের পর থেকে রাত প্রায় সাড়ে ১০টা পর্যন্ত আদালত চত্বরে মাইক লাগিয়ে চলছে ক্রিকেটের ধারা বিবরণী। সে ক্ষেত্রে মাধ্যমিক চলাকালীন মাইক ব্যবহারের বিধিনিষেধকে বুড়ো আঙুল দেখানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন আলিপুর আদালতের আইনজীবীদের একাংশ। পাশাপাশি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিবহণ দফতরের কাজও বিঘ্নিত হচ্ছে বলে অভিযোগ। আলিপুর আদালত চত্বরে জেলা পরিবহণ দফতরের যে মাঠে যান পরীক্ষা করা হয়, সেখানেই চলছে ওই প্রতিযোগিতা। ফলে, তিন দিন ধরে যান পরীক্ষার সমস্ত কাজ বন্ধ রয়েছে। ওই দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘আইনজীবীরাই যেখানে আইন ভাঙছেন, সেখানে সে বিষয়ে আমি আর কী মন্তব্য করব!’’
রাজ্য বার কাউন্সিলের সদস্য তথা আলিপুর আদালতের আইনজীবী বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিষয়টি অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। আদালতের আইনজীবীদের একাংশ অভিযোগ করছেন। যে সব আইনজীবী ওই ক্রিকেট প্রতিযোগিতার আয়োজনে জড়িত, তাঁরা যেন ভবিষ্যতে বিষয়টি বিবেচনা করেন।’’
বৃহস্পতিবার ছিল টুর্নামেন্টের শেষ দিন। আইনজীবীদের একাংশের কথায়, ‘‘এ দিন দুপুর থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ফলে খেলা বন্ধ ছিল। যার ফলে ফের আর এক দিন সেই ম্যাচ হবে। অর্থাৎ, আরও এক দিন আদালতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে।’’