• সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন, বাড়ি থেকে পালায় ‘সাহসী’ নাবালিকা, ফেরালেন বিডিও
    এই সময় | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • ছোট থেকেই স্বপ্ন ছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার। মনে অসীম সাহস। সেই সাহস থেকেই মেদিনীপুরের মেয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে পাড়ি দেয় বিহারের ছাপরা জেলায়। উদ্দেশ্য ছিল, এনসিসি ট্রেনিং নেওয়ার। দশম শ্রেণির ছাত্রীর পরিবারের লোকজন দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে বাড়িতে ফিরেছিল সেই সাহসিনী। পরীক্ষা মিটলেই মেয়ে ফের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবে সেই আশঙ্কা থেকেই ডেবরার বিডিও প্রিয়ব্রত রাঢ়ী-র সঙ্গে যোগাযোগ করেন বাবা-মা। বিডিও-র উদ্যোগে সেই মেয়েকে বোঝানো হয়, আগে পড়াশোনাটা হোক, উপযুক্ত বয়স হলে ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা হবে। মেয়েকে ফিরে পেয়ে খুশি বাবা-মা।

    জানা গিয়েছে, স্কুলে পড়াকালীনই খুদে পড়ুয়া খোঁজখবর নিতে শুরু করে, কোথায় প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া যায়। কেউ কেউ ছাত্রীকে বিহারের ছাপরা জেলার একটি ট্রেনিং ক্যাম্পের ঠিকানা দেয়। কে জানত নেহাতই খেটে খাওয়া, হতদরিদ্র পরিবারের ওই মেয়ে মাধ্যমিকের আগেই কাউকে না জানিয়ে পৌঁছে যাবে বিহারে? বাড়ি থেকে অল্প কিছু টাকা নিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষার মাসখানেক আগে সে ট্রেনে চেপে পাড়ি দেয় বিহারে।

    মেয়ের খোঁজ না পেয়ে ডেবরা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মেয়েটির বাবা-মা। ছাত্রীর খোঁজ শুরু করেছিল পুলিশ। মাধ্যমিক শুরুর দিন দশেক আগে মেয়েটি নিজে থেকে বাবা-মার সঙ্গে যোগাযোগ করে বলে, ‘আমার কাছে যা টাকা ছিল সব শেষ। তোমরা কিছু টাকা পাঠাও। আমি বাড়ি ফিরে গিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে চাই।’ এর পরই পুলিশ ও বিডিও-র সঙ্গে যোগাযোগ করে মেয়ের পাঠানো ইউপিআই নম্বরে বাবা কিছু টাকা পাঠান। ফিরে আসে মেয়ে। মাধ্যমিকও দেয় ডেবরার পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে।

    বিডিও অপেক্ষা করে ছিলেন মাধ্যমিক পরীক্ষার শেষ দিনটির (বৃহস্পতিবারের) জন্য। বৃহস্পতিবার পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরই পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে যান বিডিও। সঙ্গে ছিলেন মেয়েটির স্কুলের প্রধান শিক্ষক-সহ একাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকা। তাঁরা একান্তে একটি ঘরে মেয়েটির সঙ্গে কথা বলেন। তাকে বোঝানো হয়, এ জন্য অনেক সময় সে পাবে। তার আগে ভালো করে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া প্রয়োজন। বিডিও-সহ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাউন্সেলিংয়ে কাজ হয়। তাঁদের আশ্বস্ত করে ছাত্রী। উচ্চ মাধ্যমিকের পরেই তাকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার আশ্বাসও দেওয়া হয়।

    বিডিও প্রিয়ব্রত রাঢ়ী বলেন, ‘প্রথম যখন এই ঘটনার কথা শুনি, স্বাভাবিকভাবেই আর পাঁচটা নাবালিকা পালিয়ে যাওয়ার কেস হিসেবেই ভেবেছিলাম। পরে বুঝলাম, সেরকম কিছুই নয়। এ মেয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে চায়। যাই হোক, বোঝাতে পেরেছি। এখন নয়, উচ্চ মাধ্যমিকের পর বিষয়টি ভাবা যাবে। মেয়ে আমাদের আশ্বস্ত করেছে। তবুও, ওকে একটু একটু চোখে চোখে রাখতে বলেছি বাবা-মাকে এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের।’

  • Link to this news (এই সময়)