ভাষা দিবসে তাঁর এজলাসে বাংলা ভাষায় শুনানির কথা বলেছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। সেইমতো শুক্রবার, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে, বাংলাতেই সওয়াল-জবাব হল তাঁর এজলাস।
বৃহস্পতিবারই বিচারপতি বসু হাই কোর্টের আইনজীবীদের কাছে আবেদন করেছিলেন, যাতে ভাষা দিবসে তাঁরা তাঁর এজলাসে বাংলায় সওয়াল-জবাব করেন। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় এজলাস বসার পরেও আইনজীবীদের একই আবেদন করেন বিচারপতি বসু। বলেন, ‘‘আজ আপনারা প্লিজ বাংলায় সওয়াল করুন। কারণ আজ ভাষা দিবস।’’ বিচারপতির সংযোজন, ‘‘আমরা সকলেই জানি, উত্তর ভারতে আদালতে হিন্দিতে সওয়াল-জবাব হয়। তাই একটা দিন কি আমরা বাংলায় সওয়াল-জবাব করতে পারি না?’’
বিচারপতি বসু নিজেও বাংলাতেই কথা বলেছেন শুনানির সময়। অধিকাংশ আইনজীবীও বিচারপতির আবেদনে সাড়া দিয়ে বাংলায় সওয়াল-জবাব করার চেষ্টা করেছেন। কেউ কেউ বাংলায় কথা বলতে পারেন না। তাঁরা অবশ্য ইংরেজিতেই কথা বলেছেন।
সাধারণত, কলকাতা হাই কোর্টে শুনানি প্রক্রিয়া ইংরেজিতে হয়। ইংরেজিতেই কথা বলতে হয় আইনজীবীদের। কিন্তু দেশের বেশ কিছু হাই কোর্টে এখন ইংরেজির পাশাপাশি হিন্দিতে সওয়াল করতে দেখা যায় আইনজীবীদের। তবে ইংরেজিতে সওয়াল-জবাব হলেও সাধারণের বোঝার সুবিধার জন্য কলকাতা হাই কোর্টের বেশ কিছু নির্দেশনামার বাংলা তর্জমা করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি সুপ্রিম কোর্টের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার নির্দেশনামাও বাংলা-সহ অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষায় প্রকাশিত হয়ে থাকে। শুক্রবার সে কথা নিজেই জানিয়েছিলেন বিচারপতি বসু। সেই সঙ্গে বাংলা ভাষায় আইনের বইয়ের মান আরও ভাল হওয়া উচিত বলেই মনে করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যখন কলকাতা হাই কোর্টে ছিলেন, সে সময় তাঁর এজলাসে টানা এক সপ্তাহ ধরে বাংলায় শুনানি হয়েছিল। ওই সময় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানিও যথাসম্ভব বাংলাতেই হয়েছে। এজলাসে আইনজীবীরাও পারতপক্ষে বাংলাতেই কথা বলতেন। এ নিয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য ছিল, তাঁর এজলাসে আসা অনেকেই ইংরেজি জানেন না। অথবা, আদালতে কী হচ্ছে বুঝতে পারছেন না। তাই সাধারণ মানুষ যাতে বুঝতে পারেন, সে জন্য বাংলাতেই কথা বলার চেষ্টা করা হত।