মহাকুম্ভ নিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য ঘিরে যখন রাজ্য রাজনীতি সরগরম, ঠিক তখনই কুম্ভস্নানে গেলেন বঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা। শুক্রবার প্রয়াগরাজের ত্রিবেণী সঙ্গমে নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাঝে পুণ্যস্নান করলেন শুভেন্দু অধিকারী। সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার প্রশংসা করে সমাজমাধ্যমে পোস্টও করেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের প্রশস্তি রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতার সেই পোস্টে।
কুম্ভমেলা শেষ লগ্নে পৌঁছোনোর পথে। ২৬ ফেব্রুয়ারি মহাশিবরাত্রির পুণ্যস্নান দিয়ে শেষ হবে এ বারের মহাকুম্ভ। ভিআইপি, ভিভিআইপিরা সাধারণত বিশেষ তিথিগুলিকে এড়িয়েই স্নানে যাচ্ছেন। কারণ, পৌষ সংক্রান্তি, মৌনী অমাবস্যা, বসন্ত পঞ্চমী, মাঘী পূর্ণিমা বা মহাশিবরাত্রির মতো তিথিতেই প্রয়াগরাজে সবচেয়ে বেশি পুণ্যার্থী সমাগম হচ্ছে। সে সব দিনে ভিআইপি, ভিভিআইপিদের আনাগোনা থাকলে পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে যায়। তাই রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু বা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও ওই বিশেষ তিথিগুলি বাদ দিয়েই স্নানে গিয়েছিলেন। বঙ্গ বিজেপির সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার বা প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষও আগেই স্নান সেরে এসেছিলেন। সামনের সারির নেতাদের মধ্যে বাকি ছিলেন শুধু শুভেন্দু। তিনি মহাশিবরাত্রিতেই কুম্ভস্নানে যাবেন কি না, তা নিয়ে জল্পনা ছিল। কিন্তু সে তিথিতে বড়সড় সমাগমের কথা মাথায় রেখে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতাও আগেই স্নান সেরে নিলেন।
মঙ্গলবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা মহাকুম্ভকে ‘মৃত্যুকুম্ভ’ বলেছিলেন। যদিও একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘আমি মহাকুম্ভকে সম্মান করি। শ্রদ্ধা জানাই। পবিত্র গঙ্গা মা’কে আমি সম্মান করি। কিন্তু পরিকল্পনা না করে এত হাইপ তুলে এত লোকের মৃত্যু!’’ কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের এই পরের অংশ বাদ রেখে বিজেপি শুধু ‘মৃত্যুকুম্ভ’ মন্তব্য নিয়ে হইচই শুরু করে দেয়। শুধু রাজ্য নেতারা নন, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারাও বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তোপ দাগতে শুরু করেন। উত্তরপ্রদেশ বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথও মমতার মন্তব্যের সমালোচনা করেন। সুকান্ত বুধবার কলকাতায় পথ অবরোধ করেন। বৃহস্পতিবার শুভেন্দুর নেতৃত্বে বিধানসভা চত্বর জুড়ে বিধায়কদের মিছিল হয়। তার পরে তাঁরা রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে স্মারকলিপি দিয়ে আসেন। এর পর শুক্রবারই শুভেন্দু পৌঁছে গেলেন প্রয়াগরাজ। পুণ্যস্নান সারলেন ত্রিবেণী সঙ্গমে।
নিজের সমাজমাধ্যম পোস্টে শুভেন্দু লিখেছেন, ‘‘১৪৪ বছর পর গ্রহ-নক্ষত্রের বিশেষ যোগে অনুষ্ঠিত এই পবিত্র মহাকুম্ভে পুণ্যস্নান আমার কাছে এক অনন্য উপলব্ধি। এক বিশেষ অনুভূতি, যা ভাষায় বর্ণনা করা অসম্ভব।’’ প্রধানমন্ত্রী মোদী, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ এবং সে রাজ্যের প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়ে শুভেন্দু লিখেছেন, ‘‘কৃতজ্ঞতা জানাই সুন্দর, সুব্যবস্থার জন্য।’’