• শোভনের হয়ে কল্যাণের সওয়ালে রাজনৈতিক মহলে শোরগোল
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫


  • ফের আদালতে শুনানি কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় ও স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়ের বিচ্ছেদ মামলা। শোভনের পক্ষে মামলাটি লড়ছেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। মামলার শুনানি চলাকালীন প্রশ্ন ওঠে শোভন ও রত্নার মধ্যে কে প্রভাবশালী! তারই জবাবে প্রাক্তন মেয়রের পাশে দাঁড়ালেন কল্যাণ। তিনি বলেন, শোভন নয়, রত্নাই বেশি প্রভাবশালী। সেজন্য তিনি শোভনকে ডিভোর্স দিচ্ছেন না। শোভনের স্ত্রী রত্না বর্তমানে তৃণমূল বিধায়ক। আর আইনজীবী কল্যাণ শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ। তিনি নিজের দলের বিধায়কের বিরুদ্ধে আদালতে সওয়াল করতেই রাজ্য জুড়ে রাজনৈতিক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।

    প্রসঙ্গত শোভন শুধু প্রাক্তন মেয়র নন, তিনি ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। শোভন এখন থাকেন তাঁর বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। অন্যদিকে, রত্না শোভনেরই ছেড়ে-যাওয়া বেহালা পূর্ব কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক। আবার কল্যাণ তৃণমূলেরই প্রথম সারির সাংসদ। এমতাবস্থায় শোভনের হয়ে কল্যাণের সওয়াল করা তৃণমূলের অভ্যন্তরে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তৃণমূলের সাংসদের শোভনের পক্ষে সওয়াল শাসকদলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ক্ষেত্রে খুবই ‘তাৎপর্যপূর্ণ’। তৃণমূলের প্রথম সারির অনেক নেতাই একান্ত আলাপচারিতায় বলছেন, কল্যাণ যখন শোভনের হয়ে হাই কোর্টে লড়ছেন, তখন ‘অনুমোদন’ বা ‘অনুমতি’ ছাড়া সে কাজ সম্ভব নয়।

    শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি হিরন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের এজলাসে দেড় ঘণ্টার বেশি সময় ধরে শোভন-রত্নার বিবাহবিচ্ছেদ সংক্রান্ত মামলার শুনানি হয়। পরের সপ্তাহে এই মামলার রায় ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে। এই মামলার শুনানি চলাকালীন প্রভাবশালী তত্ত্ব খাড়া করেন রত্নার পক্ষের আইনজীবী রঞ্জন বচাওয়াত। তিনি বলেন, এই মামলায় যে হেতু দু’জনেই প্রভাবশালী, তাই সময় নিয়ে শুনানি হোক। শুনেই রুখে দাঁড়ান বিরোধী পক্ষের আইনজীবী সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। কল্যাণ বলেন, ‘আমার মক্কেল (শোভন) প্রভাবশালী নন। বরং রত্না চট্টোপাধ্যায় প্রভাবশালী। উনি বিধায়ক। উনি সশস্ত্র নিরাপত্তা নিয়ে ঘোরেন। আলিপুর কোর্টে গেলে সঙ্গে বেহালার বাহিনী নিয়ে যান।’ আদালতে কল্যাণের এহেন মন্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই রাজ্যের রাজনীতি মহলে শোরগোল পড়ে গিয়েছে।

    উল্লেখ্য, কল্যাণ তাঁর পক্ষে আদালতে সওয়াল করায় মক্কেল শোভনও রীতিমতো ‘অভিভূত’। তাঁর কথায়, ‘এই সওয়াল-জবাবে আমার আট বছরের ক্ষতে প্রলেপ লাগল। এই দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ে কখনও নিজেকে দুর্বল ভাবিনি। কিন্তু এত দিন রত্না এবং তাঁর পরিবার আইনি লড়াইকে ক্ষমতা প্রদর্শনের মাধ্যমে কলুষিত করছিল। ক্ষমতার আস্ফালনে আইনকে চাপা দিতে চাইছিল।’

    শোভন আরও বলেছেন, ‘কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জয়দীপ কর যে ভাবে আমার সমস্ত বক্তব্য তুলে ধরেছেন, তাতে আমি মক্কেল হিসেবে কৃতজ্ঞ। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আমার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী। সেই কারণেই হয়তো তাঁর সওয়ালে আইনি বক্তব্যের সঙ্গে আবেগের সংমিশ্রণও ছিল। কী ভাবে আমার কাছ থেকে সম্মানজনক জীবনযাপন করার অধিকারটাও কেড়ে নেওয়া হচ্ছিল, উনি সেটা আদালতের সামনে তুলে ধরেছেন।’
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)