অরিজিৎ গুপ্ত, হাওড়া: বান্ধবী সারাদিন ফোন না ধরাতেই খেপে যান চণ্ডীতলা থানার আইসি জয়ন্ত পাল! কেন ফোন ধরেননি তা জানতে চেয়ে গলির ভিতর দাঁড়িয়ে বান্ধবীর সঙ্গে ঝগড়া করতে করতে একটি দেশি পিস্তল দিয়ে নাকি নিজেকেই গুলি করেন। কিন্তু তাঁর কাছে সার্ভিস রিভলবার ছিল না। এমনকি আহত অবস্থায় হাসপাতালে যাওয়ার সময় গাড়িতে যেতে যেতে ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূরে হাওড়ার দালাল পুকুরের কাছে একটি জঞ্জালের ভ্যাটে পিস্তলটি ফেলে দিতে বলেন আইসি। যাতে গুলি চালনার কোনও প্রমাণ না থাকে। কারণ গুলিটি তাঁর হাতে ঢোকেনি। হাত ছুঁয়ে বেরিয়ে গিয়েছে। চণ্ডীতলা থানার আইসি গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার পুলিশি তদন্তে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল।
এই ঘটনার তদন্তে নেমে শিবপুর থানা ও হাওড়া সিটি পুলিশের আধিকারিকরা জানতে পেরেছেন, বুধবার সারাদিন আইসির তরুণী বান্ধবী তাঁর ফোন ধরেননি। ক্ষুব্ধ আইসি রাত ১১টার সময় থানা থেকে বেরোন। তারপর কোনও একটি বারে বসে প্রচন্ড মদ্যপান করেন। মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি নিয়ে হাওড়ার ঘোষপাড়ায় সেই বান্ধবীর অপর এক বান্ধবীর ফ্ল্যাটের সামনে যান। তখন ওই ফ্ল্যাটে ছিলেন তাঁর বান্ধবী। ফ্ল্যাটের সামনে গাড়ি রেখে রীতিমত ফিল্মি কায়দায় দাঁড়িয়ে কেন বান্ধবী তাঁর ফোন ধরেননি সে নিয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি জুড়ে দেন। ফ্ল্যাট থেকে নিচে নেমে আসেন ওই তরুণী। তাঁকে ডেকে কেন তিনি ফোন ধরছেন না তা জানতে চান আইসি। মদ্যপ অবস্থায় বান্ধবীর সঙ্গে চিৎকার চেঁচামেচি অশান্তি শুরু করেন। তখন সেখানে আইসির অন্য বন্ধু ও বান্ধবীরাও ছুটে আসেন। এঁদের মধ্যে এক জন রূপান্তরকামীও ছিলেন। ঝগড়া হতে হতেই রাগের মাথায় নিজের পকেট থেকে দেশি পিস্তলটি বার করে নিজের বাঁ হাতে গুলি চালিয়ে দেন।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, বন্ধু-বান্ধবীরা যখন তাঁকে একটি গাড়িতে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখনই বন্ধুদের আইসি বলেন, পিস্তলটি রাস্তায় কোনও জঞ্জালের মধ্যে ফেলে দিতে। যাতে কেউ সন্দেহ করতে না পারে। তদন্তে নেমে শিবপুর থানার পুলিশ শুক্রবার পিস্তলটি উদ্ধার করে তা বাজেয়াপ্ত করেছে। আইসির কাছে ওই দেশি পিস্তল কোথা থেকে এল তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। পাশাপাশি আইসির বান্ধবী, ওই তরুণী ঘটনার দিন তদন্তকারীদের জানিয়েছিলেন শপিং মল থেকে প্রচুর টাকার কেনাটাকা করা নিয়ে আইসির সঙ্গে তাঁর ঝগড়াঝাঁটি হয়েছিল। কিন্তু তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে কোনও শপিং সেদিন করেনি তারা। ফোন না তোলা নিয়েই বান্ধবীর সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটি করেছিলেন আইসি।
পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, জয়ন্তবাবু একজন দক্ষ পুলিশ অফিসার হলেও তাঁর বন্ধু ও বান্ধবীদের নিয়ে একটি দল আছে। যে দলকে নিয়ে মাঝে মাঝেই হাওড়ার ফ্ল্যাটে এসে মোচ্ছব করতেন আইসি। খাওয়া-দাওয়া, মদ, শপিং বান্ধবীদের নিয়ে গিয়ে শপিং করে দেদার ফূর্তি করতেন। এঁদের মধ্যে বিশেষ বন্ধু ছিলেন সাঁকরাইলের পোদরার বাসিন্দা ওই তরুণী। যাঁর সঙ্গে বুধবার রাতে বচসা হয় আইসির। পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, অত্যন্ত বদমেজাজি এই অফিসার। অল্পেতেই মাথা গরম করে ফেলেন। তবে এই ঘটনার আরও বিস্তারিত তদন্ত করছেন তদন্তকারীরা। হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, তদন্ত চলছে। আইসি দোষী প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।