নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: বৃহস্পতিবারই দুর্গাপুরের ডিএসপি টাউনশিপে উদ্ধার হয়েছে হায়নার রক্তাক্ত মৃতদেহ। প্রাতঃভ্রমণে বের হয়ে স্থানীয়রা শহরের আর্টারিয়াল রাস্তার উপর সেটি দেখেন। ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্টিল সিটির বাসিন্দাদের উদ্বেগের অন্ত নেই। দুর্গাপুরের মতো জনবহুল রাস্তায় হিংস্রজন্তু! কিছুদিন আগে বুদবুদ থানার দেবশালায় একটি নেকড়েকে পিটিয়ে মারার খবর পাওয়া যায়। যদিও প্রাণীটির দেহের ময়নাতদন্তে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনাতেই সেটির মৃত্যু হয়েছে। বনদপ্তর সূত্রে খবর, শহর এলাকায় হায়না বা নেকড়ের আনাগোনার বিষয়টি অজানা নয়। জঙ্গলে বসানো ট্র্যাপ ক্যামেরায় আগেই প্রাণীগুলির অস্তিত্ব টের পেয়েছিল বনদপ্তর। এবার বন্যপ্রাণীগুলিকে জঙ্গলে আটকে রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি তাদের উপর নিবিড় নজরদারি চালাতে জঙ্গলে ওয়াচ টাওয়ার বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাতে জন্তুগুলির গতিবিধি নজরে আসবে এবং চোরা শিকারিদের আক্রমণও আটকানো যাবে।
দুর্গাপুরের কাছেই রয়েছে মাধাইগঞ্জের জঙ্গল। পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভা এলাকার এই জঙ্গলটি এখন ইন্ডিয়ান উলফ বা নেকড়ের নিরাপদ আস্তানা। ডিএফও অনুপম খান বলেন, মাধাইগঞ্জের জঙ্গলে বহু নেকড়ের দল স্থায়ীভাবে বাস করে। আরও আকর্ষণীয় বিষয় আমরা জানতে পেরেছি, এখানে উলফের পঞ্চম প্রজন্ম জন্ম নিয়েছে। সদ্যোজাতের ছবি ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে এটি অত্যন্ত সুখবর।
মাধাইগঞ্জের পাশাপাশি জামুড়িয়ার চুরুলিয়াও প্রকৃতিপ্রেমীদের সুখবর দিয়েছে। সেখানে একাধিক হায়না ও শজারুর ছবি ধরা পড়েছে। একদিকে, উলফের দল নিশ্চিন্তে বংশবিস্তার করছে। অন্যদিকে, বিভিন্ন নতুন বন্যপ্রাণী নজরে আসায় আনন্দে বনদপ্তরও। কিন্তু তাদের রক্ষা করতে গিয়ে দপ্তরের আধিকারিকদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। শহরাঞ্চলের মাঝে প্রাণীগুলিকে নিরাপদে রাখতে বনদপ্তর মাস্টার প্ল্যান তৈরি করছে। বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, নিজেদের প্রয়োজনে ইসিএল ও একটি বেসরকারি গ্যাস উত্তোলনকারী সংস্থা নিয়ম মেনে বনদপ্তরের জমি নিতে আর্জি জানিয়েছে। সে ক্ষেত্রে তাদের একটি ওয়াইল্ড লাইফ ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান জমা করতে হয়। প্রয়োজনীয় অর্থ দিয়ে তা বাস্তবায়িত করতে হয়। সেই প্রকল্পের অধীনেই জঙ্গলে আরও বেশি করে ক্যামেরা বসিয়ে নিবিড় নজরদারি করা হবে। পাশাপাশি, উপর থেকে নজরদারি করার জন্য বহু ওয়াচ টাওয়ার তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে। বন্যপ্রাণীরা যাতে লোকালয়ে না ঢোকে, সেজন্য জঙ্গলে পর্যাপ্ত খাবার ও জলের জোগান রাখার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আসন্ন গ্রীষ্মকাল নিয়েই বেশি উদ্বেগে দপ্তরের আধিকারিকরা। তখন শিল্পাঞ্চলের জঙ্গলের খাল-বিলে জল থাকে না। বনদপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, আমাদের জঙ্গলের মাঝে আদিবাসী গ্রাম রয়েছে। অনেক সময়ে বাসিন্দাদের গৃহপালিত পশু নিখোঁজ হচ্ছে। তাও তাঁরা কোনও পাল্টা আক্রমণ করেননি। বন্যপ্রাণীদের বংশবিস্তারে তাঁদের ভূমিকাও কম নয়।