• ডোকরা শিখতে আউশগ্রামে ইন্ডিয়ান আর্ট কলেজের শিক্ষার্থীরা
    বর্তমান | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • সংবাদদাতা, কাটোয়া: ভাস্কর্যের বাজারে ডোকরার কদর ভালোই। ডোকরার প্রতি নতুন প্রজন্মেরও আগ্রহ বাড়ছে। লুপ্ত হতে বসা ডোকরা প্রাণ ফিরে পাচ্ছে নব প্রজন্মের উৎসাহে। কলকাতা থেকে পড়ুয়ারা আউশগ্রামে এসে শিখছেন ডোকরার কাজ। মোমবাতির কাঁপা কাঁপা আলোয় শিল্পীদের থেকে ডোকরার পদ্ধতি আয়ত্ত্ব করছে। 


    চলতি সপ্তাহজুড়ে আউশগ্রামের দরিয়াপুরের ডোকরা পাড়ায় এসেছেন ইন্ডিয়ান কলেজ অব আর্ট অ্যান্ড ড্রাফটসম্যানশিপের শিক্ষার্থীরা। উদ্দেশ্য হাতেকলমে ডোকরার কাজ শেখা। দরিয়াপুর গ্রামে ১৯৬৩ সালে শিল্পীদের নিয়ে প্রথম ‘ডোকরা আর্টিজান কো-অপারেটিভ ইন্ডাস্ট্রিয়াল সোসাইটি লিমিটেড’ নামে একটি সমবায় গড়ে তোলা হয়। পরে পশ্চিমবঙ্গ খাদি এবং গ্রামীণ ইন্ডাস্ট্রিজ বোর্ড ওই সমবায়কেই নতুন রূপে সাজিয়ে তোলে। শিল্পের তালিম নিতে আসা দেশবিদেশের অতিথিদের জন্য গেস্ট হাউস গড়ে ওঠে। সেখানেই ঘাঁটি গেড়েছেন পড়ুয়ারা। শিল্পী শুভ কর্মকারের কাছে তাঁরা ডোকরার কাজ শিখছেন। 


    বৃহস্পতিবার রাতে ডোকরা পাড়ায় গিয়ে দেখা গেল, বাতির আলোয় সৌম্যদীপ বেরা, অর্ঘতরু ভট্টাচার্য, দেবব্রত দাসরা এক মনে কাজ শিখছেন। তাঁরা বললেন, দেখুন আমাদের কলেজে ভাস্কর্য শিল্পের নানা প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। সেরামিক, ধাতু, পিতল দিয়ে ভাস্কর্য গড়া যায়। আমরা মূলত চেষ্টা করছি ডোকরার ধাঁচে আমাদের মতো করে ভাস্কর্য গড়তে। তাতে মানুষের কাছে এই শিল্পটা আরও আকর্ষনীয় হবে। পড়ুয়া অরিজিৎ গুছাইত, ঈশিতা দাস, মৃগাঙ্ক শেখর বাগ বলেন, ভাস্কর্যের বাজার বরাবরই রয়েছে। আমরা চাই শিল্প বাঁচুক। তাতে আমাদের মতো নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের কর্মসংস্থান হবে এমন ভাস্কর্য শিল্পের হাত ধরেই। 


    আউশগ্রামে সারাদিন ঠুকঠাক আওয়াজ তুলে তৈরি হচ্ছে নানা অবয়ব। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে বিভিন্ন শো-পিস তৈরি করছেন শিল্পীরা। দেশীয় বাজারে বেড়েছে শিল্পের মান। ‘লস্ট ওয়াক্স কাস্টিং’ পদ্ধতিতে শিল্প গড়া দেশের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাচীনকাল থেকে চালু আছে। পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম ১ ব্লকের দিগনগর ২ পঞ্চায়েতের দরিয়াপুর গ্রামের ডোকরা শিল্পীরা সেই ঐতিহ্য বহন করে চলেছেন। কল্পনা, বৈচিত্র্য এবং কারিগরি তিনটিই একসঙ্গে এসে মিশেছে গ্রামের এই লোকশিল্পে। আউশগ্রামের ডোকরা শিল্পীরা রাষ্ট্রপতি পুরস্কারও পেয়েছেন। 


    মোম গলিয়ে ছাঁচ তৈরি করে এক দেশজ পদ্ধতিতে ধুনো, তামা, পিতল ঢালাই করে এই কাজ করেন তাঁরা। নানা ধরনের মূর্তি, অবয়ব, শো-পিস তৈরি করেন শিল্পীরা। সেই পদ্ধতিই শিখতে এসেছেন নতুন প্রজন্মের পড়ুয়ারা। শিল্পী শুভ কর্মকার বলেন, ডোকরা শিল্পের প্রতি নতুন প্রজন্মের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। আমার কাছে দেশের বিভিন্ন কলেজ থেকে প্রশিক্ষণ দিতে ডাক আসে। এখন নদীয়ার কল্যাণী কলেজে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। শিল্পের বাজার আছে। কর্মসংস্থান ও কাজের পরিসর বাড়ছে। তবে গ্রামের শিল্পীরা বলছেন, সন্ধে নামলেই আঁধারে ডুব দেয় ডোকরা পাড়া। অথচ এখানেই দেশ বিদেশের নামী লোকেদের আনাগোনা। তাই সরকার এখানেই প্রশিক্ষণের জন্য বড় কর্মশালা গড়ে তুলুক।  তাতে বহু বেকারের কর্মসংস্থান হবে। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)